চিকিৎসকদের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ বহির্বিভাগের কার্যক্রম। ফলে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের প্রতিটি কক্ষের সামনে সেবা প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে টিকিট সংগ্রহ করে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও দেখা পাননি চিকিৎসকের। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেন অনেকে।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা থেকে আসা আরেফিন বিল্লাহ বলেন, বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি সকাল ১০টার দিকে। দুপুর গড়িয়ে আসলেও চিকিৎসক আসেননি। আমি শিক্ষকতা করি, আজ ছুটি থাকায় এসেছি। অথচ এসে চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। শুধু আমি নই, অন্য রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতালে আসা রোগী সাদিয়া আফরিন বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি সেই সকালে এখনও দেখাতে পারিনি। আজ তো দেখাতে পারিনি, আগামীকালও ডাক্তার আসবে কি না জানি না।
ডাক্তারদের রুমের সামনে রোগীদের সিরিয়াল দেখভালের দায়িত্বরতরা জানান, সকালে আমরা এসেছি। এসে দেখি চিকিৎসকরা আসেননি। ফোন করলে তারা জানিয়েছেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা, এ জন্য আসেননি। রোগীরা আসছেন, আবার ফিরে যাচ্ছেন।
এদিকে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ গত মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালকের স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে ৫১ জন চিকিৎসককে কালো তালিকাভুক্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে বহির্বিভাগের ১৭ জনসহ বিভিন্ন বিভাগের রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, কনসালট্যান্ট ও ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। নিরাপত্তা ঝুঁকিতে এদের অনেকেই হাসপাতালে আসেনি।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুমন রায় মুঠোফোনে বলেন, গতকাল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এ সময় ডাক্তার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী এসে আমাদের ঘিরে ধরে। পরে তারা উপপরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। আর আমাদের প্রায় ৫১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন৷ ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় আমরা আসিনি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা আমাকে পাঠিয়েছেন, হাসপাতালে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চিকিৎসকদের নিয়ে কোন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কিনা দেখতে। সকালে আমরা এখানে এসেছি, এসে দেখি ডা. মোস্তফা কামাল নেই। বহির্বিভাগে অনেক রোগী এসে ফিরে যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়। আমরা চাই হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, গত ১৬ বছর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারা নিগৃহের শিকার হোক আমরা চাই না। আমরা জানতে পেরেছি অনেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ মিটাচ্ছেন। একজনকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনকে বসানোর একটা ফাইদা লোটার চেষ্টা চলছে।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, কার্ডিওলোজি বিভাগের ডা. মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষার্থী জোরপূর্বক তাকে নোটিশে স্বাক্ষর ও আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন। তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানিয়েছেন।
ইএইচ