নোয়াখালী শহরের একমাত্র সরকারি স্কুল হেলথ ক্লিনিক এখন নিজেই রোগী হয়ে পড়ছে।
দু’জন চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন ফার্মাসিস্ট ও এমএলএসএসসহ ৫ জন জনবল থাকলেও শুধুমাত্র ফার্মসিস্টই দিচ্ছেন চিকিৎসাসেবা।
দুই চিকিৎসকসহ বাকি ৪ জনই ক্লিনিকে অনুপস্থিত দেখা গেছে। এতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন নোয়াখালী পৌরসভার ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নোয়াখালী জিলা স্কুল সংলগ্ন স্কুল হেলথ ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট আবদুর রাজ্জাক তার টেবিলে বসে ২৫ থেকে ৬৫ বছরের কয়েকজন নারী-পুরুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
এ সময় ওই ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র চিকিৎসক শাহরিন আক্তার ও চিকিৎসক সাজ্জাতুল ইয়াকিন এবং সেকমো শারমিন আক্তার তারিনকে পাওয়া যায়নি, এমএলএসএস নজরুলও ছিলেন অনুপস্থিত।
এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসলেও চিকিৎসক না থাকায় তারা ফার্মাসিস্টের কাছে চিকিৎসাসেবা না নিয়ে অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরে যেতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ৫ থেকে ১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা, প্রতি সপ্তাহ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের শরীর চেকআপ, স্যানিটেশনের ব্যবহার, স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে নোয়াখালী জিলা স্কুল সংলগ্ন স্কুল হেলথ ক্লিনিক ও জেলা বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্কুল হেলথ ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো সরকারের পক্ষ থেকে এই স্কুল হেলথ ক্লিনিকে চিকিৎসক, সেকমো, ফার্মাসিস্ট ও এমএলএসএস নিয়োগ দিয়ে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা, ওষুধ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়।
কিন্তু জেলা শহরের স্কুল হেলথ ক্লিনিকে চিকিৎসক, সেকমো, ফার্মাসিস্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই সেবা কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদসহ একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় স্কুল হেলথ ক্লিনিক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু নোয়াখালীতে এই ক্লিনিকের কার্যক্রম অনেকটা দুর্বল। যার কারণে কখনো এই ক্লিনিকের কেউ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে শিক্ষার্থীদের শরীর চেকআপ, স্যানিটেশনের ব্যবহার, স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর সচেতন বিষয়ক কোন কার্যক্রম করতে দেখি নাই।
ক্লিনিকে উপস্থিত ফার্মসিস্ট আবদুর রাজ্জাক জানান, সিনিয়র চিকিৎসক শাহরিন আক্তার উনার বাচ্চার মাদরাসা শহরের কামাল কমপ্লেক্সে আছেন। বাচ্চাকে বাসায় দিয়ে তার পর ক্লিনিকে আসবেন। চিকিৎসক সাজ্জাতুল ইয়াকিন আছেন প্রশিক্ষণে এবং সেকমো শারমিন আক্তার তারিন ছুটিতে। তাই রোগীদের চাপ সামাল দিতে আমি চিকিৎসা পরামর্শ ও ওষুধ প্রদান করছি। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা না দিয়ে ১৭ বছরের অধিক বয়স্কদের কেন চিকিৎসা প্রদান করছেন এবং আপনি চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নে আবদুর রাজ্জাক বলেন, আসলে মানুষজন এসে সেবা চাচ্ছে, তাই দিচ্ছি। আমি কিন্তু শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিচ্ছি না, সেটা চিকিৎসক আসলে উনারা দিবেন।
সিনিয়র চিকিৎসক শাহরিন আক্তার ক্লিনিকে অনুপস্থিত কেন তা তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাচ্চার মাদরাসায় আছি, আমি সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়ে এসেছি।
ক্লিনিকের সেকমো শারমিন আক্তার তারিনের ছুটির একটি আবেদন ফার্মাসিস্ট আবদুর রাজ্জাকের টেবিলে দেখা গেছে। তবে ওই আবেদনে কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দেখা যায়নি।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ ইফতেখার বলেন, আপনি এখন যান, ম্যাডাম আসতেছে। আমি বিষয়টি দেখতেছি। কোন অসংহতি পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইএইচ