পুলিশের গুলিতে আহত আকবরকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলো রাজারবাগ হাসপাতালে

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম
পুলিশের গুলিতে আহত আকবরকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলো রাজারবাগ হাসপাতালে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন আকবর হোসেন। তার শরীরে গুলির অসংখ্য স্পিপ্লিন্টার রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা থেমে গেছে।

এ খবর পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে।

শনিবার দুপুরে পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়।

তার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া (দক্ষিণ) ইউনিয়নের দায়চারা গ্রামে।

সূত্র জানিয়েছে, গ্রামের দিন মজুর প্রতিবন্ধী রওশন আলী ও ফেরদৌসী বেগম দম্পতির ছেলে আকবর হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন আকবর হোসেন। আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্র জনতা নিহত হওয়ার খবর শুনে আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য বাড়ি থকে মা-বাবা নিষেধ করেছেন। বারণ না শুনে, তিনি সাধারণ ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে নিয়মিত অংশ নেন। পুলিশের গুলিতে ২০ ও ২২ জুলাই আহত হয়েছেন। তারপরও আন্দোলনে যাওয়া বন্ধ করেননি। ৪ আগস্ট পুলিশের ছররা গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। এতে তার সমস্ত শরীরে অন্তত দুই শতাধিক ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। এতে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সহপাঠীরা উদ্ধার করে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এরপর সিলেটের ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ, সিএমএম, ইবনেসিনাসহ প্রাইভেট আরও দুটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। অর্থাভাবে তার চিকিৎসা থেমে যায়। শরীরে স্পিপ্লিন্টার নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

গত দু’দিন আগে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রকিব (পি.পি.এম) এ সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. হানিফ সরকারকে জানান। তার নির্দেশে এসআই ইসমাইল হোসেন বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে আকব হোসেনের সমস্ত শরীরে রাবার বুলেটের অন্তত দুই শত গুলির আঘাত দেখতে পান, তিনি এর আগে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখেন ও সেগুলো সংগ্রহ করে পুলিশ সুপারকে পাঠানো হয়।

এরপর, আকবর হোসেন ও তার মা-বাবাকে শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে নিয়ে আসায় হয় ফরিদগঞ্জ থানায়। তাদের সাথে আলোচনা করে ও চিকিৎসার জন্য পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের সঙ্গে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই হাসান ও কনস্টেবল হারাধনকে পাঠানো হয়েছে।

আহত আকবর হোসেন বলেন, জীবনে কিছু পাই বা না পাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আছি এবং থাকবো। যেহেতু আমিও একজন ছাত্র। আমি লেখাপড়া শেষ করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করে মা-বাবার দুঃখ গোছাতে চাই। এখন, আমাদের সরকার ক্ষমতায়। আশা করছি, সরকার আমাদের মত সকল মা-বাবার সন্তানের কর্মক্ষেত্র তৈরি করবেন।

চিকিৎসার দায়িত্ব পুলিশ নিয়েছে দেখে খুশিতে আত্মহারা বাবা খুশিতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না।

এক পর্যায়ে বলেন, আমাদের ছেলের চিকিৎসার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এসপি, ওসি ও ইসমাইল স্যারের মুখে চিকিৎসার খবর জানতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। আমরা তাদের জন্য দোয়া করছি।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হানিফ সরকার বলেন, আইজি, ডিআইজি, এসপি স্যার জানতে পেরে দ্রুত তার চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আমরা নির্দেশ মোতাবেক দায়িত্ব পালন করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। আমরা আশা করছি আকবর হোসেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন।

ইএইচ