রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজের উপর রয়েছে টিকটকারদের আনাগোনা। অথচ বিপুল অর্থ ব্যয়ে নিয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজে আগ্রহ নেই পথচারীদের।
এদিকে রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষাবিদের মতে, এসব ফুটওভার ব্রিজের এখন কোনো প্রয়োজন নেই।
অপরদিকে নগরবাসী বলছেন, শুধুমাত্র সরকারি অর্থ অপচয় করার জন্য এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।’
রাসিক সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীতে ৮টি ফুটওভার নির্মাণকাজ হাতে নেয় রাসিক কর্তৃপক্ষ। পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য রাসিকের পলাতক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সময়ে এ ব্রিজগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এর মধ্যে রাজশাহী নগরীর নিউ গভঃমেন্ট ডিগ্রি কলেজ গেট, লক্ষ্মীপুর মিন্টু চত্বর, নওদাপাড়া বাজার, তালাইমারী মোড়, বিনোদপুর মোড় ও অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে নির্মাণকৃত ৬টি ফুটওভার ব্রিজের কাজ শেষ হয়।
অপরদিকে নগরীর মনিচত্বর ও মিশন গার্লস স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
নগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুইটি প্যাকেজে প্রায় ৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ পেয়েছে মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লি. ও এমএসসিএল অ্যান্ড এমএসডিবিএল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজের উচ্চতা ৫.৮ মিটার ও প্রশস্ততা ৩.৬ মিটার। ফলে অনেক উঁচুতে পায়ে হেঁটে উঠে রাস্তা পার হয়ে আবার নিচে নামার জন্য কেউ এই ব্রিজ ব্যবহার করছেন না। রাস্তার মাঝখান দিয়েই পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। ফলে কোনোই কাজে আসছে না এ ব্রিজগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে। সড়ক বিভাজকেও নাই গ্রিল। যার কারণে কেউ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেনা। আর রাজশাহীর শহরে এতো গাড়ির চাপও নাই যে গাড়ির ভয়ে মানুষ ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে কষ্ট করে রাস্তা পার হবে। এমনিতেই রাস্তা পার হতে যেখানে লাগে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড। সেখানে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে গেলে লাগবে অন্তত কয়েক মিনিট। তাহলে কে উঠবে ওই ব্রিজে। কোনো সম্ভাবনা যাচাই-বাছাই না করেই এই ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন- শুধুমাত্র সরকারি অর্থ অপচয় করার জন্য এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।’ যার কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও সেখান দিয়ে পথচারীরা চলাচল করছেন না।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এমএসটি ইলমে ফরিদতুল বলেন, এগুলো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আগামীতে থাকতে পারে। তবে এখন এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের যেখানে সমস্যা নেই, সেখানে আগাম সমাধানের দরকার কী? এগুলো বানানোর সময় প্লানিং ও ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কেউ ছিল না বলেই এগুলো মিসিং হয়েছে। কারণেই এগুলো মানুষ ব্যবহার করছে না।
রাসিকের প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষ এখনো অভ্যস্ত নয়। তবে যেটি হয়ে গেছে, সেটি আর তো নষ্ট করা যাবে না।’ এগুলো ব্যবহারের উপযোগী করতে আমরা কাজ করছি। নির্মাণেও কিছু ত্রুটি আছে।
ইএইচ