সুনামগঞ্জের নবগঠিত উপজেলা মধ্যনগর। যেখানে হয়নি উপজেলার নিজস্ব কোন অফিস। নেই স্থায়ী উপজেলা পরিষদের কার্যালয় ও পর্যাপ্ত লোকবল।
বেশিরভাগ দপ্তরেই অতিরিক্ত দায়িত্বে চলে আংশিক সেবা। ইতিমধ্যে সর্বশেষ ধাপে এই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণে দেরি হওয়ায় মধ্যনগর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং বিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে উপর নির্ভর করে ভোগান্তির মধ্যদিয়ে অস্থায়ী ভাবেই চলছে অফিসিয়াল কার্যক্রম।
এ সকল সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান আসতে পারে শুধুমাত্র পুর্ণাঙ্গরূপে উপজেলার সচল হলেই। না হয় যেকোনো সময় থমকে গিয়ে ‘যেই লাউ সেই কদু’ হতে পারে এমনটাই ধারনা করছেন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা।
২০২১ সালের ২৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে উপজেলাটি। এরপরপরেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়ন করে কর্তৃপক্ষ। এবং ক্রমান্বয়ে চারজন ইউএনও নিয়োগ করা হলেও যোগদান করেন মাত্র দুজন। অন্য দুজন যোগদান না করেই অন্যত্র বদলি নেন। এছাড়া বেশিরভাগ সময়ই অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলাটির অবকাঠামো নির্মাণ, প্রয়োজনীয় দপ্তর ও পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার বারংবার নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়ন করা হলেও আসতে বা থাকতে চান না তারা। আসার আগেই খোঁজ নেন বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে কী না?
উপজেলার ২৪টি দপ্তরের অনুকূলে ২৩৮ জন লোকবল থাকার কথা। কিন্তু এখানে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক দুজন, শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীসহ ৯ জন। আউটসোর্সিংভাবে ১২ জনসহ মাত্র ২১ জন রয়েছেন।
যুব উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা যোগদান করলেও মাত্র কয়েকদিন থাকার পরেই বদলি নিয়ে চলে যান অন্যত্র। এছাড়াও জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মধ্যে উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব সহকারী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, আনসার ভিডিপি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি, প্রাণি সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, পরিবার পরিকল্পনা, মহিলা অধিদপ্তর, পল্লী উন্নয়ন, পরিসংখ্যান, মাধ্যমিক শিক্ষা, ফটোকপি অপারেটরসহ অসংখ্য পদে জনবল না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সেবা।
সবশেষে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বদলি জনিত কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি আবারো শূন্য হয়।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গিয়াসউদ্দীন (ইউএনও) অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণের মধ্যে বেশিরভাগ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকাস্থ ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উন্নয়ন ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব কুমার রায় চয়ন বলেন, আমরা উপজেলা পেয়েছি ঠিকই। তবে সব রকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমি বুঝি অবহেলিত জনগোষ্ঠীর যক্ষের ধন পুর্ণাঙ্গরূপ পেলেই সকল সমস্যার সমাধান আসবে। ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যনগরের কৃতিসন্তান ডা. বিধান রনজন রায় পোদ্দার অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তার সঙ্গে অবকাঠামোর বিষয়ে কথা বলেছি এবং এ সকল সমস্যার সমাধান চেয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন- মধ্যনগরের বিষয়টি ঊর্ধ্বতনের সাথে কথা বলে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইএইচ