তাহিরপুরের বিকিবিলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা

তাহিরপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম
তাহিরপুরের বিকিবিলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিকিবিলজুড়ে পানির উপরে সবুজ পাতা ভেদ করে ফুটেছে অজস্র মনোমুগ্ধকর চোখ জুড়ানো লাল শাপলা ফুল।

যেদিকে চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। সাথে যোগ হয়েছে দেশীয় নানান প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ। যেন প্রকৃতি তার রূপের সাথে নিজেই যেন ছড়িয়ে দিয়েছে বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনাধারা। মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষে লাল-সবুজে ভরা প্রকৃতির সাথে ফুটন্ত রক্তিম লাল শাপলা ফুল যেন মিতালি করছে।

প্রকৃতির এমন ছোঁয়া যেন মন কেড়ে নেয় সৌন্দর্যপিপাসুদের। রাত পোহাতেই গ্রামীণ এ জনপদে লাল শাপলার রূপ দেখতে জড়ো হন পর্যটকরা।

প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শাপলা ফুলের উপস্থিতি এই বিলে দেখা যায়। এখন বিলের পানির ওপরে শাপলা ভেসে বেড়ায়। আর তাই পর্যটকদের ভিড়ও বাড়ে প্রতিদিন।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিলে লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১১টার ভেতরে যেতে হবে। কারণ সূর্যের উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে লাল শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। গত দুই যুগ ধরে কোনোরকম চাষাবাদ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলা ফুল ফুটছে।

উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রামের বিকিবিল হাওরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জায়গা নিয়ে শাপলা ফুলের বাহার। বছরের ছয় মাস পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। লাল শাপলার পাশাপাশি বিলটিতে সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও জন্মে।

আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা সকালে বিলে এসেই শাপলার ফাঁকে ফাঁকে ছোট নৌকায় করে ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। আর বিলের পানিতে নেমে শালুক তুলছে আশপাশের গ্রামে শিশুরা। এগুলো বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয়ও করেন তারা।

জানা যায়, ২০১৯ সালে লাল শাপলার বিকিবিলকে হাওর পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসা ইফতি শিকদার ইশা বলেন, এখানকার শাপলার সৌন্দর্য সম্পর্কে যা শুনেছি বাস্তবে তার চেয়ে সৌন্দর্য অনেকগুণ বেশি। যেন রঙ তুলিতে আঁকা প্রকৃতির একটি নির্মল ছবি। ২০ কিলোমিটার গ্রামীণ পথ অনেক কষ্টে পেরিয়ে এখানে এসে মুগ্ধ হয়েছি।

আরেক দর্শনার্থী এ্যানি আক্তার বলেন, একসঙ্গে এত শাপলা দেখতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। অনেক শুনেছি এখানকার কথা। প্রকৃতির এমন দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগে। আর লাল শাপলার বিলে নৌকায় করে মানুষকে আনন্দ উপভোগ করতে দেওয়া স্থানীয় মাঝিরা বলেন, এখানে আমরা পর্যটকদের জন্য বসে থাকি। একসঙ্গে বেশ মজাই হয়। দেশের দূরদূরান্ত থেকে শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা প্রতি বছরই এখানে আসেন। ৭ থেকে ৮ বছর ধরে এখানে সৌন্দর্যপিপাসুদের ভিড় বেশি পরিলক্ষিত হয়।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি লাল শাপলার বিকিবিল। লাল শাপলার মনোমুগ্ধকর এ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন নানা প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক আসেন। এখন প্রয়োজন এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

ইএইচ