বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলার সাত উপজেলায় আতঙ্কে রয়েছে চরাঞ্চলে বসবাসকারী জনসাধারণ দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে দাবি জেলা প্রশাসনের।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি মুষলধারায় বৃষ্টিপাতসহ দমকা হাওয়া বইছে।
মেঘনা তেতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকলেও বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে জোয়ারের পানি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বুধবার দুপুরে ভোলা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এতে ৫০০ জন করে মোট ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। ১৪টি মাটির কিল্লায় ৭০০ জন করে ৯ হাজার ৮০০ জন, এ ছাড়া ১৪টি কিল্লায় ৫ হাজার ৩৯০টি গবাদিপশুর আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিপিপি রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১৩ হাজার ৮৬০ জন, ৯৮টি মেডিকেল টিম, ২১টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
এ ছাড়াও ৫৮৪ টন ত্রাণ সামগ্রী, ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ শিশুখাদ্য এবং গোখাদ্যও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজে মনপুরা উপজেলার কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছিই বসবাস করি। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আজ সকাল থেকে বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বইছে।
বেড়িবাঁধ নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় আছি, না জানি কি হয়। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালে আমাদের বাড়িঘরসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এউপজেলার চরাঞ্চলে গবাদিপশু নিরাপদে রাখার জন্য কোনো কিল্লাও নেই।
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা, তজুমদ্দিন, লালমোহন উপজেলার প্রতিনিধিদের সাথে কথা হলে তারা জানান আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সকাল থেকে দমকা বাতাসসহ ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। এরপর দুপুরের দিকে ফের গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, যা এখনো চলছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
দুপুরে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো-১) মো. হাসানুজ্জামানকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি জানান, এখনো জোয়ারের পানি তেমন বৃদ্ধি পায়নি এবং বিপৎসীমাও অতিক্রম করেনি।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান আমার সংবাদকে জানান, ঘূর্ণিঝড় দানা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ভোলা জেলাকে সংরক্ষিত রাখার জন্য গতকাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি জরুরি সভা করেছি। সভা থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আরও জানান, ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের যেখানে আশ্রয়কেন্দ্র নেই সেখানে আমরা বড় বড় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেবো এবং ভোলায় ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৯৮টি মেডিকেল টিম, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, গোখাদ্য ও নগদ টাকা, স্বেচ্ছাসেবী, প্রস্তুত রেখেছি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা তৎপর রয়েছেন।
ইএইচ