টাঙ্গাইলে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।চলতি বছরে অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে চলে যাবে এবং শীতকালীন সবজি বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রতিবছর এ জেলায় উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় সব ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ হয়ে থাকে। যমুনা, ধলেশ্বরী ও লৌহজং নদী বিধৌত এই জেলার ভূমি বিন্যাস উর্বর হাওয়ায় বিশেষ করে জেলার চরাঞ্চল ও সমতল উপজেলায় প্রচুর শীত কালীন শাক-সবজি চাষ হয়ে থাকে।
এ ছাড়া জেলার পাহাড়ি তিনটি উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে শীতের সবজি চাষ হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর জেলার ১১ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবজির ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছর বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে সবজি চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। নষ্ট হয়ে যায় বীজ ও চারা। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে জেলার বাজারগুলোতে। হঠাৎ বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়ে যায়। বর্ষা মৌসুম কেটে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুরু করেছেন শীতকালীন সবজি চাষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাষ করা সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, পাতাকপি, মুলা, টমেটো, শিম, লাউ, পালংশাক, লালশাক সহ হরেক রকমের সবজি। কৃষকদের মধ্যে কেউ জমি তৈরি করছেন, কেউ জমিতে বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউ আবার জমিতে গজিয়ে ওঠা সবজির চারা গাছের পরিচর্যা করছেন। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলার ক্ষেতের পর ক্ষেত যেদিকে চোখ যায় শুধু শীতের সবজি চাষাবাদের দৃশ্য। সবজিক্ষেত নিংড়ানো, আগাছা পরিষ্কার ও পানি দিতে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষাণিরা। অনাগত ফসলের দিকে তাকিয়ে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের গালার চরের রহিম বাদশা জানান, অন্য ফসলের চেয়ে আমাদের এলাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে শীতকালীন সবজি চাষের জমির পরিমাণ। এই অঞ্চলে এক সময় ধানের চাষ হতো। এখন সে জায়গায় নতুন নতুন বসতি হওয়াতে চাষের জমিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সেই ধান চাষের পরিবর্তে এখন এ এলাকায় হচ্ছে সবজির আবাদ।
সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বাগুনটাল গ্রামের কৃষক মজিদ মন্ডল জানান , অন্যান্য ফসলের চেয়ে শীতকালীন সবজি আবাদ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে আমি প্রতি বছরই সবজি চাষ করি। তাতে বাজারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদাও থাকে, আবার লাভবান হওয়া যায়।
ঘাটাইল উপজেলার কৃষক আলাউদ্দিন জানান, আমাদের এই আগাম সবজি বাজারে উঠার পরই কমে যাবে সবজির দাম। একই সঙ্গে বাজারে সবজির সংকটও কেটে যাবে। আশা করছি, এ বছর সবজি চাষে লাভবান হবো।
টাঙ্গাইলের কৃষিবিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা ফারজানা খান জানান ,এ জেলা সব ধরনের সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর জেলায় বিপুল পরিমাণ সবজির চাষ হয়। তাতে জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।এদিকে সব ধরনের সবজির দামও ভাল পাওয়া যায়। সে জন্যই এ বছর কৃষকরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে শীতকালীন সবজি আবাদে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. দুলাল উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও টাঙ্গাইলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। এর ফলে বাজারে সবজির সংকট কেটে যাবে, একই সঙ্গে দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
বিআরইউ