বৈষম্যবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ৬ দফা দাবিতে বরিশাল-কুয়াকটা মহাসড়ক অবরোধ করে দেড় ঘন্টব্যাপি বিক্ষোভ করেছে। এতে করে সড়কের দু’পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার বেলা ১২ টার দিকে নগরীর জিরো পয়েন্ট আমতলার মোড় এলাকায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বরিশাল আইএইচটি শাখার ব্যানারে এ অবরোধ কর্র্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
দেড় ঘণ্টা সময় সড়কে অবস্থান নেয়ায় সড়কের দু’পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে ভোগান্তিতে পরে অভ্যান্তরীণসহ দুরাপাল্লায় যাতায়াতকারী সাধারণ যাত্রীরা। তবে এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়ি যেতে সহায়তা করেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জানায়, বিভিন্ন সময়ে যে বৈষম্যের শিকার হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ এবং ভবিষ্যতে যেন তারা আর বৈষম্যের শিকার না হয় এবং দেশের আপামর জনসাধারণের মানসম্মত ও সঠিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স ও ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় প্রশাসনিক জটিলতায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার ১০৬ জন, এগুলোর বিপরীতে মোট পদের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৭৫টি। তবে চিকিৎসক ও নার্সের বিদ্যমান সংখ্যার অনুপাতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ৮০ হাজারেরও বেশি।
দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় টেকনোলজিস্টদের একটি বড় অংশের সরকারি চাকরিতে আবেদন বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। নিজস্ব কোনো দফতর না থাকায় এ দক্ষ অথচ বেকার জনগোষ্ঠী এক প্রকার হতাশাগ্রস্ত জীবন-যাপন করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছয় দফা দাবি না মানা হবে সড়ক থেকে সরবেনা শিক্ষার্থীরা এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছে অবরোধ থেকে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বতন্ত্র পরিদপ্তর গঠন করতে হবে; ডিপ্লোমাধারীদের ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণীর গেজেটেড) পদমর্যাদা প্রদান করে ডঐঙ এর আনুপাতিক হারে পদ সৃজন পূর্বক দ্রুত নিয়োগ এর ব্যবস্থা করতে হবে পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের স্থগিতকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে; গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নবম গ্রেডের পদসৃষ্টি পূর্বক চাকরিজীবীদের আনুপাতিক হারে পদোন্নতির নিয়ম বহাল রেখে স্ট্যান্ডার্ড সেট আপ ওনিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; ঢাকা আইএইচটি কে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর করে একটা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল আইএইচটি তে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার প্ল্যান গঠন করে বিদ্যমান নিয়োগ বিধি ও অসংগতিপূর্ণ গ্রেড সংশোধন করতে হবে; মেডিক্যাল টেকনোলজি কাউন্সিল ও ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড গঠন এবং প্রাইভেট সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং বি ফার্ম সহ সকল অনুষদের বি এস সি ও এম এস সি কোর্স চালু করা এবং স্কলারশিপসহ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু করার দাবি জানাননো হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল আইএইচটি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জিদান, মো. আবির হাসান, মো. মুকিম শেখ, ২য় বর্ষের আবু বক্কর সিদ্দিক, রাকিব বিশ্বাসসহ প্রমুখ।
এদিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় সড়কের দু’পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে এতে করে চরম ভোগান্তিতে পরে সাধারণ যাত্রীরা। দেড় ঘণ্টা পরে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সড়ক থেকে উঠে যায় শিক্ষার্থীরা। এতে করে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নিজ ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা।
আরএস