চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রামে যৌথবাহিনী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে যৌথবাহিনী।

নগরের হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। ওই এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

যৌথবাহিনীর পক্ষে টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদসহ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হাজারি গলিসহ নগরীর অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনাকর্তা বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব ধারায় চলবে। মাঠপর্যায়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য যাচাই বাছাই করছি। সে অনুযায়ী আমরা আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করবো। সরকার পতনের পর যেসব শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে, সেসব সমাবেশে যেন শান্তি বিঘ্নিত না হয় আমরা সেজন্য সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী কাজ করেছি।’

হাজারি গলির দোকান সিলগালার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওই এলাকায় সেনা ও পুলিশ সদস্যের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দোকানগুলো সিলগালা করা হয়৷ আমরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়াচ্ছি। অতিসত্তর তদন্তকার্যক্রম শেষ করে দোকানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।’

আটক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের কোনো পলিটিক্যাল পরিচয় আসলে আসে না। তাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) প্রতিনিধি।

থমথমে এলাকা, দোকান সিলগালা

এদিকে, আজ (বুধবার) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজারি গলির স্বর্ণ এবং ওষুধসামগ্রী বিক্রির দোকান বেশিরভাগই সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। অনেক ওষুধ ক্রেতা ওষুধ কিনতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। আর যেসব দোকান খোলা রয়েছে তারাও অবসর সময় কাটাচ্ছেন।

কয়েকজন দোকানির সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাতের দিকে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও সকাল নাগাদ তা শিথিল করা হয়েছে। সিলগালা করা দোকান কবে খুলবে—তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারাও।

দেখা গেছে, টেরিবাজার মোড় হয়ে হাজারি গলি সড়কের প্রবেশ পথের গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। অন্যদিকে, কেসিদে সড়কের মুখেই রাখা আছে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান। ওই সড়কটি বর্তমানে চালু রয়েছে।

যা ঘটেছিল

টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় ওসমান আলী নামে একজন ব্যক্তির ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে টেরিবাজার এলাকার হাজারি লেইনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারি লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ৬টি টহল দল সেখানে পৌঁছায়।’

তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মবজাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও একপর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড-হামলা চালায় এবং ভারী ইটপাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে।’

ফের হামলার কথা জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘ফলে সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্য এবং ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহত সেনাসদস্যরা বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন। এছাড়া, ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুঁড়ে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে ফেলে। উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত শনাক্তকরণে যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক ৯টার দিকে ওই এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতকারীরা ফের যৌথবাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ ছুঁড়তে শুরু করে। এ সময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হয়।’

ইএইচ