হতদরিদ্র মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ।
সরকারিভাবে সহায়তার পাশাপাশি বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমেও বরিশাল নগর থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন তিনি।
এমনকি নিজের বেতনের একটি অংশও অসহায় মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। সহায়তা করাই এখন তার নেশা। এমন সহায়তা পেয়ে চিকিৎসাবঞ্চিত এবং পড়ালেখা নিয়ে সমস্যায় পড়া শিক্ষার্থীরা বেশি উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কেউ কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়েছেন। প্রবেশনের মাধ্যমে অপরাধীদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করতে সহায়তা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। হিজড়াদের চাঁদাবাজির পথ ছেড়ে উপার্জনক্ষম করতে এখনও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
সাজ্জাদ পারভেজের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নিজের টেবিলের ওপরে ‘স্যার, আপনার জন্য কী করতে পারি’ লেখা সংবলিত নেমপ্লেট লাগিয়ে রেখেছেন। সেবাপ্রার্থীরা স্যার বলে ডাকার আগেই নিজ থেকেই স্যার বলে সম্বোধন করেন। বিষয়টি সবাইকে অবাক করে। ফলে সহায়তা চাইতে কারও দ্বিধা কাজ করে না।
এক মহিলা তার ভাইকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করাতে ১৪ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। এই টাকা তিনি জোগাড়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। পরে সাজ্জাদ পারভেজ কাছে গেলে তার বন্ধুদের নিয়ে গড়া ইভেন্ট-৮৪ সংগঠন থেকে টাকা এনে আমার হাতে তুলে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে ইভেন্ট-৮৪-এর পক্ষ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উইলসন রোগে আক্রান্ত এক পরিবার তিন সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার পরিচালনা করতে পারছিলেন না। ছুটে আসেন সাজ্জাদ পারভেজের কাছে। তিনি বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের সহায়তা করেন।
এভাবে প্রতিদিন চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছেন সাজ্জাদ। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন ছোটখাটো অপরাধে কারাগারে পাঠানো হয় শিশু-কিশোর-যুবকদের। দুই শতাধিক অপরাধীকে ভালো পথে এনেছেন। নগরের হিজড়াদের টাকা তোলায় অভ্যস্ত থেকে সরিয়ে বিভিন্ন কাজে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১৬ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘সরকারের পক্ষে সব হতদরিদ্রকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। এ কারণে সমাজসেবার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলা ইভেন্ট-৮৪-এর (এসএসসি) পক্ষ থেকে হতদরিদ্র মানুষগুলোকে সাহায্যের চেষ্টা করে যাচ্ছি। হতদরিদ্র মানুষগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসলে তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, হতদরিদ্র মানুষকে সহায়তা করা তার নেশা হয়ে উঠেছে। এমন মহৎ কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে সরকারের পাশাপাশি তার মতো লোকজন হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ালে দেশের বহু মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন।
ইএইচ