হেমন্তের নতুন ধানের ঘ্রাণে নবান্নের আমেজ

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
হেমন্তের নতুন ধানের ঘ্রাণে নবান্নের আমেজ

কুয়াশা ভেদ করে যখন সূর্যের আলো প্রকৃতিতে আসে, তখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে দিগন্ত বিস্তৃত আমনের খেত। সোনামাখা রোদে মাঠে মাঠে ঝলমলিয়ে উঠে সোনালি ধান। সেই ধানের ঝিলিক যেন ছড়িয়ে পড়েছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষকদের চোখে-মুখে।

প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই মাঠে মাঠে সোনালি ধানের হাসি আর নবান্নের উৎসব। আমন ধান ঘরে এলেই গ্রামবাংলার কৃষকদের চিরায়ত এক উৎসবের নাম নবান্ন। অগ্রহায়ণ মাসে ঘরে প্রথম ধান তোলার পর নতুন চাল দিয়ে উৎসবটি পালন করেন সাধারণ মানুষেরা।

কালাই উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা। গানে গানে ধান কেটে চলছেন কৃষকেরা।

কালাই পৌর সদরের আকন্দপাড়া মহল্লার কৃষক মো.এনামুল বলেন, এবার দুই একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। এখন জমির সেই ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছি। ‘ধানের ফলন ভালো হইচে। দামও ভালো আছে।

উপজেলা মাত্রাই ইউনিয়নের বালাখুর গ্রামের কৃষক নওফেল বলেন, খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামুটি লাভ হবে। ধান উঠলে যেই টাকা হাতে পাবেন, সেটা দিয়ে আবার আলু লাগাবো। খেত থেকে ধান কেটে আনার পর কৃষকেরা বাড়ির উঠানে মাড়াই করছেন। ধানের ম-ম গন্ধ এখন কৃষকের উঠানজুড়ে। গ্রামের কোথাও কোথাও বাড়ির গৃহিণীরা সামগাইনে (কাঠের তৈরি ধান-চাল গুঁড়া করার যন্ত্রবিশেষ) নতুন ধানের চাল গুঁড়া করছেন। চালের সেই গুঁড়ায় তৈরি হবে নানা রকমের সুস্বাদু পিঠা-পায়েস।

উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের শাপলা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন ‘নতুন ধানের পিঠা-পায়েস না খাইলে কী হয়? ছোট থেকেই নতুন ধানের চালের ক্ষির, পায়েস খেয়ে আসছি। এই চালের গুঁড়া দিয়ে ভাপা, চিতই, তেল পিঠাসহ কত পিঠা হবে!’

আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুনজা গ্রামের পারভিন আক্তার, রাজিয়া পারভিন ও ফাতেমা আক্তার ‘দৈনিক আমার সংবাদ’কে বলেন, ‘নতুন ধান উঠলেই সেই ধানে চাল করে গুঁড়া করি। গুঁড়া করা চালে তৈরি পিঠা অনেক মজা হয়। পিঠা বানানোর দিন আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা বাড়িতে আসেন। সবাই একসঙ্গে বসে পিঠা বানাই।’

নবান্ন উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন ধান তোলার এই আনন্দ সবাই একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া। গ্রামবাংলার কৃষকদের এই আয়োজনকে অসাম্প্রদায়িক সামাজিক উৎসব বলে মনে করেন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা। তবে কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে নবান্ন উৎসবের পরিসর অনেকাংশে কমে গেছে।

উপজেলার পুনট গ্রামের লোক গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মো. আব্দুল মজিদ বলেন, একসময় আড়ম্বরপূর্ণভাবে নবান্ন উৎসব উদ‌যাপিত হতো। সব ধর্মের মানুষের জন্য অসাম্প্রদায়িক সামাজিক উৎসব হিসেবে সারা দেশেই নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিল। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মিলে এ উৎসব উদ্‌যাপন করা হতো। তবে এখন মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন কমে গেছে। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে নবান্ন উৎসবের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে যদি তৃণমূল পর্যায়েও বড় পরিসরে উৎসব আয়োজন করা যেত, তাহলে এই ঐতিহ্য দীর্ঘদিন টিকে থাকত।

বিআরইউ