কালাইয়ে জমে উঠেছে মাছের মেলা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:২৬ এএম
কালাইয়ে জমে উঠেছে মাছের মেলা

অগ্রহায়ণ মাস শুরুর সঙ্গে গ্রাম বাংলার পরিবেশে ফসল তোলার ধুম পড়ে যায়। নতুন ধান ঘরে তোলে কৃষকরা। শুরু হয় নবান্ন।

কৃষিমুখী মানুষগুলোর মাঝে বইতে থাকে উৎসবের হাওয়া। যান্ত্রিক সময়ে এসব খুব একটা দেখা যায় না। তবু এখনও বহু গ্রামে টিকে আছে নবান্নের রীতি।

এমনই ধারাবাহিকতার দেখা মিলে জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসা মাছের মেলায়।

সেখানে সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, ব্ল্যাককার্প, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। সেখানে ভোর থেকে বসেছে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম।

৫ কেজি থেকে শুরু করে ১৮ কেজি ওজনের বড় মাছ মিলছে এখানে। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতিকেজি মাছ ৩শ থেকে ১২শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেল, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রোববার কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে মাছের মেলা। নবান্ন উৎসবে প্রতি বছর এখানে মাছের মেলা বসে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৯০-১০০টি গ্রামের মানুষ মেলায় অংশ নেন।

অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে বসেছে উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে প্রায় অর্ধবর্ষের এই মাছের মেলা। এ দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব। অর্ধশতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। ক্রেতারা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত।

শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। এই মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল এই মেলায়। ক্রেতারা খালিহাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন। মেলা উপলক্ষ্যে আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসি।
মেলায় ঘুরতে আসা মোছা. পারভিন আক্তার বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই আমি প্রতিবছর এই মেলা দেখতে আসি। এ মেলার জন্য আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করি। আমাদের বাড়ির জন্য এবার ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনেছি।

উপজেলার মাত্রাই গ্রামের বাসিন্দা মো. আতিকুর রহমান জানান, এই নবান্নের মেলা আমাদের কাছে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দের। বাড়িতে মেয়ে জামাই, ভাগ্নি জামাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। এই মাছের মেলা কেন্দ্র করে তারা বাড়িতে এসেছে।

মেলায় মাছ কিনতে আসা চঞ্চল বাবু নামে এক জামাই বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে যাই হউক না কেন এই মেলা থেকে ১৮ কেজি ওজনের একটি ব্ল্যাককার্প মাছ কিনে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।

আকন্দপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো.এনামুল আকন্দ বলেন, প্রায় অর্থবর্ষের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি এই এলাকায় ধান-আলুতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসে।

এই মেলায় মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন, মাছের মেলাতে বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কাতলা, রুই, ব্ল্যাককার্প, মৃগেল ব্রিগেড, সিলভার ৫শ’ থেকে ১২শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা মো. রনি বলেন, আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ বিক্রি জন্য আসি। বর্তমান সবজিনিসের দাম বাড়তি, তবে মাছের বাজারে তুলনায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কিনছেন। এবার মাছ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবেনা। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ১০ থেকে ১৫ মণ করে মাছ বিক্রি করেন। তাছাড়া লাভও মোটামুটি হবে।

কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, প্রতি বছর এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব বিরাজ করে। আজও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ মেলায় এবার ৪০-৫০টি স্টলের মাধ্যমে দিন শেষে এখানকার ব্যবসায়ীরা অন্তত কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা করবেন। মেলায় কেউ যেনো বিষাযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।

ইএইচ