অভয়নগরে আমন ধান চাষে পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
অভয়নগরে আমন ধান চাষে পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে এবার যশোরের অভয়নগরে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হয়নি। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আছেন দুশ্চিন্তায়। প্রতিবছরই রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।

উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল হাইব্রিড ১৭৯০ হেক্টর, উফসী ৫৮২৫ হেক্টর এবং স্থানীয় ২৫ হেক্টর মিলে মোট ৭,৫৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে অর্থাৎ ৭৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির।

ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের উৎপাদন কম হবে প্রায় ৯ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন। এবার আমন উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫,৮১৪ হেক্টর জমিতে। গতবছর আমন উৎপাদন হয়েছিল ৭,৫৫০ হেক্টর জমিতে। এবছর ১ হাজার ৭৩৬ হেক্টর কম জমিতে রোপা আমন উৎপাদন
হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দলী ইউনিয়নের পুরো ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন উৎপাদন।

কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভায় আমন আবাদ হয়েছিল ৮৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১০ হেক্টর জমির ধান। উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছিল ১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩৩ হেক্টর জমির ধান। সুন্দলী ইউনিয়নে চাষ হয়েছিল ৮৩৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরো ৮৩৫ হেক্টর জমিরই ধান। চলিশিয়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬০ হেক্টর জমির ধান। পায়রা ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ৬০৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৮ হেক্টর জমির ধান। সবচেয়ে বেশি আমন আবাদ হয়েছে শ্রীধরপুর ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে। বাঘুটিয়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে, শুভরাড়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ৪৬০ হেক্টর জমিতে। সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে চাষ হয়েছে মাত্র ১৪০ হেক্টর জমিতে।

উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের আড়পাড় গ্রামের কৃষক কিংকর বিশ্বাস বলেন, শুড়িরডাঙ্গা বিলে বর্গা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলেন ১ একর (২.৫ বিঘা) জমিতে। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। পরের জমি বর্গা নিয়ে স্বর্ণা জাতের আমন ধান চাষ করেছিলাম।

উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের রবিউল খন্দকার বলেন, চাত্রার বিলে দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছি। একে তো বাড়ির উঠানে পানি। তারপর পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেল। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, তাই নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। সরকার যদি একটু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তাহলে বেঁচে যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার জন্য আমনের এই উৎপাদন কম হয়েছে। জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তবে যে সকল জলাবদ্ধ এলাকা থেকে আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে সেখানে স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল বিনা-১৪ ধান আবাদের পরিকল্পনা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সময়ের সবজি উৎপাদন বাড়ানোর উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সবজি চাষ বাড়ানোর জন্য ৪৭৫ জনকে উফশী সবজি বীজ ও জনপ্রতি নগদ ১ হাজার দেয়া হচ্ছে। ৮৫০ জনকে হাইব্রিড সবজি প্রণোদনা দেয়া হবে। এছাড়া বোরো মৌসুমে যাতে বেশি ধান উৎপাদন করা যায় সেদিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবো।

বিআরইউ