সংযোগ সড়ক না থাকায় উপকারে আসছে না ৮টি সেতু

রাজবাড়ী প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম
সংযোগ সড়ক না থাকায় উপকারে আসছে না ৮টি সেতু

রাজবাড়ীতে ৮টি ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় জনসাধারণের কোন কাজে আসছে না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় এমন ৮টি সেতু পাওয়া গেছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেতু নির্মিত হয়েছে। এসব সেতু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) বিএডিসি ফরিদপুর প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়কের পাশে সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাটিপাড়া জামে মসজিদের পাশের ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কমবেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯৪৫ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়।

ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজমনি কনস্ট্রাকশন এটি বাস্তবায়ন করে। নির্মিত সেতুটির ওপারে বাম পাশে একটি কবরস্থান এবং ডান পাশে কয়েকটি বসত ঘর রয়েছে। সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকার মানুষের খুব একটা কাজে আসছে না।

একই অর্থবছরে ওই প্রকল্পের অধীনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রাম-বানিবহ খালের হারান মণ্ডলের বাড়ির পাশে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৯ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৩৬ ফুট লম্বা সেতু। এ সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুর রহিম মোল্যা। সেতুটির এক পাশে বয়ে গেছে রাস্তা। অপর পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সেতুটির পাশে ২টি বসতঘর রয়েছে। যেখানে বাস করে দু’টি পরিবার। ওই সেতুটির সাথেই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের সৈয়দ পাঁচুরিয়া মৌজায় ০.৮০০ কি.মি. সৈয়দ পাঁচুরিয়া খাল এবং চন্দনি ইউনিয়নের আজুগড়া মৌজায় ০.২৯০ কি.মি. আজুগড়া খাল মোট ১.০৯ কি.মি. খাল পুনঃখনন ও আনুষাঙ্গিক কাজের ভিত্তি ফলক বসানো হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) বিএডিসি ফরিদপুর প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সেচ বিভাগের বাস্তবায়নে কাজ করেছে ঢাকা উত্তরা ৬ সেক্টরের মেসার্স মানিক এন্টারপ্রাইজ। এ সেতু থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সৈয়দ পাঁচুরিয়া মধ্যপাড়া মন্দির সংলগ্ন খালের উপর একই প্রকল্পের অধীনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় ৩২ ফুট একটি সেতু। যেটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭২২ টাকা। এ সেতুটির ওপারেও রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। ডানপাশে দুটি বসতঘরে বাস করে একটি পরিবার। একই এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের সৈয়দ পাঁচুরিয়া খাল ১.৫৮০ কি.মি. খাল পুনঃখনন ও আনুষাঙ্গিক কাজের ভিত্তি ফলক বসানো হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) বিএডিসি ফরিদপুর প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সেচ বিভাগের বাস্তবায়নে কাজ করেছে রাজবাড়ীর খোন্দকার এন্টার প্রাইজ ও বিসমিল্লাহ কনস্ট্রাকশন।

এ সেতুটিরও একপাশে সড়ক থাকলে অপর পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। একই গ্রামের অনতিদূরে আলতাফের বাড়ির কাছে আরও একটি সেতু। ১৫ ফুট লম্বা সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১৫Ñ১৬ অর্থ বছরে। এই সেতুটির একপাশে রাস্তা। অন্য পারে ব্যক্তি মালিকানাধীন মেহগনি বাগান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মরডাঙ্গা খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে। ২৮ লাখ ৯ হাজার ৯শত ৪৫ টাকা খরচে ৩৬ ফুট লম্বা নির্মিত ব্রিজটি স্থানীয় সাবেক এমপি কাজী কেরামত আলী উদ্বোধন করেছেন।

এ সেতুটির সংযোগ সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের এক পাশে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে রয়েছে মেহগনি গাছের বাগান এবং খানাখন্দ। অন্য পাশে রয়েছে প্রচণ্ড ঢালু। পায়ে হেঁটে কোনো রকম চলতে পারলেও একটি রিকশা, ভ্যান নিয়ে চলাচল করা সম্ভব নয়। চলতে পারে না কোনো প্রকার যানবাহন। যে কারণে ব্রিজটি কোনো প্রকার উপকারে আসছে না এলাকাবাসীর।

একই প্রকল্পের সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদিয়া সিরাজ মাস্টারের বাড়ির পাশে খালের উপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতুটি লম্বায় ২৮ ফুট। এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২৩ লাখ দুইহাজার নয়শ তিন টাকা।

পরের বছরের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই গ্রামে ফজের উদ্দিনের বাড়ির পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২৪ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৮ টাকা। নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সদর উপজেলার রায়নগরের মেসার্স খন্দকার এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয় সাবেক সাংসদ কাজী কেরামত আলী এ সেতু উদ্বোধন করেন। এক সেতু থেকে আরেক সেতুতে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে পাঁচ মিনিট। তাতে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। তবে একটি সরু পায়ে হাঁটা রাস্তা কিছুদূর গেছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রাস্তা না থাকায় এসকল সেতু কোনো কাজেই আসছে না। কার স্বার্থে কার ভালোর জন্য যে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তা বোঝা দুষ্কর। তবে মাঠ থেকে ফসল আনা নেয়ায় একটু সুবিধা হয়। আর সেতুর পাশে থাকা দুই-একটি পরিবার বাস করে। তাদের বেশি সুবিধা হয়। 

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রকৌশলী বিজয় প্রামানিক বলেন, এ প্রকল্পে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ এবং এমপির অনুমোদনের ভিত্তিতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ হয়ে থাকে। স্থানীয় জনসাধারণের উপকারের জন্য নির্মাণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়া দুঃখজনক। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। বলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ