এক বছর আগে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো ভবন হস্তান্তর করা হয়নি। তবে কাজ সম্পন্ন হওয়া ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে পানি। কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে এগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
এই চিত্র সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের বীরমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় পাঁচতলা নতুন ভবনের। ভবন নির্মাণে উঠেছে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ।
অথচ বিদ্যালয়ের নতুন এই ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, বড় ধরনের অনিয়ম না হলে ঢালাই ও রুফ টাইলস ভেদ করে পানি চুঁইয়ে পড়ার কথা নয়। পানি চুঁইয়ে পড়ার বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ভবনের বেইজ ঢালাই, বিম ঢালাই, ছাদ ঢালাইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে সার্বক্ষণিক তদারকির নিয়ম থাকলেও সাইটে থাকেন না ইঞ্জিনিয়ার। এতে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ পায়। যার ফলে ভবনের বিমে ফাটল, ছাদে ফাটল, ছাদ চুঁয়ে পানি পড়া, ফিটিং সঠিক না হওয়া, পলেস্তারা উঠে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
সঠিক তদারকির অভাবে উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের বীরমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের শেষ দিকে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়রা বলছে, অবহেলিত হাওরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ আশা আকাঙ্ক্ষা ফসল বীরমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলেও কেউ দেখার নেই।
এদিকে, অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজের শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার আর নানা অনিয়মের অভিযোগে কয়েকবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির লোকজন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের একাধিক বাঁধা নিষেধের পরও বন্ধ হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম। একের পর এক কাজে অনিয়ম আর দুর্নীতির কোন শেষ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের অধীনে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে বীরমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় সিলেটের আতা এন্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত দেড় বছর সময়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও ৩ বছরে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষদের শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বীরমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ তলা ভবন নির্মাণকে ঘিরে ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এক নতুনদিগন্তের স্বপ্ন দেখছে।
তবে ভবনের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ছাঁদ চুঁইয়ে পানি পড়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানান টালবাহানায় কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার অতিরিক্ত আরও আড়াই বছর পেরিয়ে গেলে এখনও কাজ চলছে ধীর গতিতে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে এলাকাবাসী।
আতা এন্ড কোম্পানির ঠিকাদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে দু’দিন থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুল আরেফিন খাঁন বলেন, তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয়টি দেখা হবে। তবে পানি চুঁইয়ে পড়েছে এটা আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ অবগত করে নাই। এরপরও যদি কাজে ত্রুটি থাকে অবশ্যই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় কাজ সঠিকভাবে করে দিতে হবে। ত্রুটিগুলো সংশোধন না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইএইচ