ফরিদপুরের সদর উপজেলার চরনসিপুর এলাকায় সাত বছরের এক শিশু কন্যা তাহিয়া(৭)কে হত্যার ঘটনায় উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন অভিযুক্ত হত্যাকারী। তাহিয়া চর নসিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে পুলিশ গিয়ে অভিযুক্ত শাহিন ওরফে হায়দার মোল্লাকে (৫৫) আটক করে।
উপজেলার চরনসিপুর গ্রামের জিয়ারত আলী জিয়া`র মেয়ে। শিশু তাহিয়া সম্পর্কে শাহিন মোল্যার চাচাতো নাতনী। নিহত শাহিন মোল্লা ওই গ্রামের জহিরউদ্দিন মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে খেলতে গিয়ে চরনসিপুর গ্রামে নিখোঁজ হয় জিয়ারত আলীর শিশু কন্যা তাহিয়া। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার পিতা কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। এঘটনায় পুলিশ বুধবার বিকেলে গিয়ে ওই এলাকায় তল্লাশি চালায়। এ সময় পুলিশের সন্দেহ হয় পাশের বাড়ির শাহিনুর ওরফে হায়দার মোল্লাকে। পরে তার ঘরের ভিতর থেকে একটি বস্তার ভিতরে বিদ্যুতের তার পেঁচানো অবস্থায় তাহিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। এ সময় আটক করা হয় শাহীনকে। পুলিশ তাকে হ্যান্ডকাফ পড়ানো অবস্থায় ঘরের ভেতর আটক করে রাখা হয়। স্থানীয়রা বারবার পুলিশের কাছে শাহীনকে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। এ সময় কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ও অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম উত্তেজিত জনতাকে থামাতে বারবার চেষ্টা করেন। তাদের সাথে বারবার কথা বললেও উত্তেজিত জনতা তাদের কথা না শুনে ঘর ভেঙ্গে ঘরের ভিতর থাকা শাহীনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েও শান্ত করা যায়নি পরিবেশ।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, উত্তেজিত জনতাকে থামাতে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। হাজার হাজার জনতা অভিযুক্ত শাহীনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নিখোঁজ শিশুকন্যার খোঁজে এলাকায় তদন্ত করতে আসে পুলিশের দল। এ সময় পুলিশ তদন্তে প্রতিবেশী শাহীনকে সন্দেহ হলে তার ঘর থেকে তাহিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। আমরা বাড়ির সামনে থেকে উত্তেজিত জনতাকে থামাতে চেষ্টা করছিলাম। তারা ঘরের পিছন থেকে গিয়ে ঘর ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের পর শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়না তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শৈলেন চাকমা বলেন, হত্যার আগে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা, তা ময়নাতদন্তের পর জানা সম্ভব হবে। লাশ দুটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিআরইউ