ঝিনাইদহে দাফনের ৬১ দিন পর স্কুল ছাত্রের লাশ উত্তোলন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম
ঝিনাইদহে দাফনের ৬১ দিন পর স্কুল ছাত্রের লাশ উত্তোলন

লাশ দাফনের ৬১ দিন পর আদালতের নির্দেশে ঝিনাইদহে সোহান (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রের লাশ উত্তোলন করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মেফতাহুল হাসানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ সদর উপজেলার নগরবাথান গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে সোহানের লাশ উত্তোলন করে। সোহান ওই গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় রহস্যজনক মৃত্যু হয় সোহানের। ২১ সেপ্টেম্বর ময়না তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে সোহানের লাশ একটি মহল ঝিনাইদহের নগরবাথান গ্রামে দাফন করে।

লাশ দাফনের পর সোহানকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রচার হলে ঝিনাইদহ সদর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার পিতা শহিদুল ইসলাম ৮জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করলে ঝিনাইদহ সদর আমলি আদালতের বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

সোহানের মা সুন্দরী খাতুন অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে নগরবাথান গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সাকিব (২৭)। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

মামলার বাদী শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সাকিব ও তার অজ্ঞাত বন্ধুরা সোহানকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঢাকার পূর্বাচলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে শহিদুল ইসলাম ছেলেকে বাড়িতে ফেরার জন্য ফোন করলে সোহান জানায়, সে খুব ঝামেলায় আছে। এরপর সোহানের পিতা সাকিবকে ফোন করে। এ সময় ফোন ধরে সাকিব গালিগালাজ করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে সোহানের পিতাকে ফোন করে জানানো হয় সোহান হাসপাতালে। খবর পেয়ে সোহানের পিতা হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান সাকিবের দুই ফুফু ডায়রি খাতুন ও আরজিনা খাতুন সেখানে উপস্থিত।

সোহানের পিতা আরও অভিযোগ করেন, হাসপাতালে থাকতেই সাকিবের পিতা আব্দুল আজিজ তাকে ফোন করে কোন ঝামেলা না করার জন্য হুমকি দেন তার মোবাইল ফোনে।

এছাড়াও সাকিবের ফুফা আরব আলী তাকে শিখিয়ে দেন পুলিশ গেলে আমি যেন তাদের বলি সোহান দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

গ্রামবাসী জানায়, আসামি সাকিবের ফুফু ডায়রি খাতুন ও আরজিনা ঢাকায় মানুষের দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির ব্যবসা করে। এই অপকর্ম করে তারা ইতিমধ্যে ঢাকা ও ঝিনাইদহ শহরের একাধিক স্থানে বহুতল ভবন তৈরি ও জায়গা জমি কিনেছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝিনাইদহ গোয়েন্দা বিভাগের এসআই শরীফ জানান, আদালতে এ নিয়ে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ফলে আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করা হচ্ছে। ময়না তদন্তের পর বোঝা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারণ।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা-আল মামুন জানান, আমি আদালতের মাধ্যমে জানতে পারি সোহানের পিতা ৮জনকে আসামি করে ঝিনাইদহ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেন। 

এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার সকালে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মেফতাহুল হাসানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ সদর উপজেলার নগরবাথান গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে সোহানের লাশ উত্তোলন করেছে। আর এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয় এখানে আমার বলার কিছু নেই। এটা আদালতেই বিচার হবে।

বিআরইউ