কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকিমুক্ত ও বীজ সাশ্রয়ী কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি।
এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বেড়েই চলছে। যার ফলে সময় ও খরচ দুটিই কম লাগছে কৃষকদের। সুস্থ চারা উৎপাদনের নিশ্চয়তা ও চারার কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকি একেবারেই নেই এ পদ্ধতিতে। তাই কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরিই বর্তমানে আদর্শ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ধানের চারা মূল কৃষি জমিতে রোপণের আগে যেখানে চারা উৎপাদন করে রোপণ উপযোগী করা হয় তাকেই বীজতলা বলা হয়। কৃষক তার পুরো জমিতে চারা রোপণের জন্য অল্প জায়গায় এক সঙ্গে ছিটিয়ে বীজ বপন করে বীজতলা তৈরি করেন। সনাতন এই পদ্ধতিতেই কৃষক বীজতলা তৈরি করে থাকেন।
এই পদ্ধতির বীজতলায় বেশি পরিমাণে বীজ ব্যবহার করা হয় যার ফলে চারাগুলো লিকলিকে হয়ে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
বর্তমানে কৃষি বিশেষজ্ঞরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে উপজেলার জগদল ব্লকের জগদল গ্রামে কৃষক মো. আরিফুল ইসলাম, মো. জলিল মিয়া, আশরাফুল, ফরিদ উদ্দিন, খোকন, পঙ্কজ, কাঞ্চন মিয়ার সঙ্গে কমিউনিটি বীজতলার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ডাহরা ও জগদল ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা মিলে এবার আদর্শ বীজতলা বা কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করছেন। এ বীজতলার চারপাশে ছয় ইঞ্চি গভীরতা এবং ৫০ সেন্টিমিটার চওড়া করে নালা রেখে ১.০০-১.২৫ মিটার প্রস্থ ও ১০মিটার লম্বা বেড তৈরি করে দুই বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রেখে প্রতি বর্গমিটার বেড়ে ৮০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। সে মোতাবেক আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলার জগদল ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুদাসিল হায়দার বলেন, এই পদ্ধতিতে বীজতলায় চারা উপাৎদন সুস্থ এবং কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকি কম থাকে। ফলে হোসেনপুরে দিনদিনই এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করার জন্য কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করছেন তিনি। যে কারণে এ মৌসুমে শতকরা ৮০ ভাগ কৃষকই কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অনেকগুলো কমিউনিটি ও আদর্শ বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে। অন্যান্য কৃষকদেরকেও উদ্ধুদ্বকরণের মাধ্যমে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে প্রতি বিঘায় সাড়ে ছয় কেজি বীজ সাশ্রয় হয়। যা থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে বীজতলা করার সুবিধা হলো রাতের বেলায় বেডে পানি দিয়ে দিনের বেলায় তা নিষ্কাশন করলে অধিক শীতের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে ধানের চারা মরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই এ উপজেলায় কমিউনিটি বীজতলা তৈরিতে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইএইচ