চিকচিকে বালুর চরে লাল কাঁকড়ার দলবেঁধে লুকোচুরি খেলা। সৈকতে ভাটার পর বালুচরে নিজের তৈরি করা বাসা থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটি এবং পা দিয়ে নানান আকৃতির আল্পনা তৈরি করে পর্যটকদের আনন্দের বাড়তি মাত্রা যোগ করছে পটুয়াখালীর সমুদ্র ঘেঁষা দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন বালুচরের লাল কাঁকড়ার দল।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাইলের পর মাইল চিকচিকে বালুর মাঝে পা ফেলানো আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। লাল কাঁকড়ার দল বালুচরে দলবেঁধে লুকোচুরি খেলা, নানা জাতের পাখির কলকাকলি, খুব বিহানে (সকালে) সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা বেলাশেষে আবার পশ্চিমের নদীতে ডুবে যাওয়ার মত দৃশ্য সৌন্দর্য প্রেমীদের মন ভুলিয়ে দেয়। রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কলে সৃষ্ট এই চরহেয়ার ও সোনারচরের অবয়ব দৃশ্য সকল সৌন্দর্য প্রেমীদের কাছে ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে। তবে স্থানগুলো এখনো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পুরোপুরি আত্মপ্রকাশ না করায় দর্শনার্থীদের জন্য কোন থাকা, খাওয়ার সু-ব্যবস্থা নেই। তবে ভবিষ্যতে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা এবং বিভিন্ন সময়ে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন চরের বুকে সকাল-বিকাল দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল কাঁকড়া। মানুষের স্পর্শ পেলে গর্তে ঢুকছে। আবার গর্ত থেকে বেরিয়ে চলাচল করছে। প্রতিদিন জোয়ারের পর ভাটায় পানি নেমে গেলে পুরো সৈকত লাল বর্ণ ধারণ করে। টকটকে লাল কাঁকড়াগুলো দেখে ভ্রমণে আলাদা তৃপ্তি পাচ্ছেন পর্যটকরা। এ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি বিনোদন প্রেমীদের কাছে। সংশ্লিষ্টদের সমূদ্রসৈকতের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সমুদ্রতটে আসা এক দর্শনার্থীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ছুটির দিনে পরিবারের সবাই বেড়াতে এসেছি। সমূদ্রের চরে লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি দেখে খুব ভালো লাগলো। তবে এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো লাগতো।
সমূদ্রঘেষা চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. বেল্লাল খান বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরের খুব কাছেই রয়েছে চরহেয়ার ও সোনারচর তাই দক্ষিণাঞ্চলের এসব পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
রাঙ্গাবালী পর্যটন সেবা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা (নিরাপত্তা) কমিটির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চরহেয়ার ও সোনারচরের লাল কাঁকড়া পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হওয়ায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। এ জন্য বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনকে এগিয়ে আসা দরকার। জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি আরও আকর্ষণীয় হবে। নিঃসন্দেহে পর্যটকদের আরো বাড়তি আনন্দ দেবে।’
রাঙ্গাবালী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা অমিতাভ বসু বলেন, উপক‚লীয় বন বিভাগ কর্তৃক বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ইতোমধ্যে সমুদ্রে জেগেওঠা বহু চর স্থায়িত্ব অর্জন করেছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গাবালী উপজেলায় পর্যটন উন্নয়নের মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। পর্যটন ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে অপার সম্ভাবনাময় চরহেয়ার ও সোনারচর অভয়ারণ্য ঘেঁষা জেগে ওঠা বালুর চরে লাল কাঁকড়ার বিচরণে আগত পর্যটকদের মুখরিত করে তোলে। দ্বীপগুলো প্রতিনিয়ত ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকৃষ্ট হচ্ছ। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বন বিভাগ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।
দূর দর্শনার্থী যেভাবে আসবেন:
দেশের যে কোনো স্থান থেকে জেলা সদর পটুয়াখালী আসতে হবে। পটুয়াখালী থেকে বাস যোগে গলাচিপা হরিদেবপুর। সেখান থেকে খেয়া পার হয়ে গলাচিপা। এরপর মোটর সাইকেল বা পিকআপ যোগে পানপট্টি লঞ্চঘাট থেকে নৌ-পথে সোনারচরে যেতে পারেন ।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা:
চরহেয়ার ও সোনারচর উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের কাছাকাছি হওয়ায় চরমোন্তাজেই আবাসিক হোটেল রয়েছে এবং সাথে খাওয়ার ব্যবস্থা। এখান থেকে সকালে চরহেয়ার ও সোনারচর গিয়ে দিনব্যাপি হৈ হুল্লোরে কাটিয়ে সন্ধেবেলা ফিরে আসা যায়।
বিআরইউ