নাটোরের মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণের হত্যা নিয়ে রহস্য

মনজুর ই মওলা সাব্বির, নাটোর প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
নাটোরের মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণের হত্যা নিয়ে রহস্য

নাটোরের বড়হরিশপুরে অবস্থিত কাশিমপুর মহাশ্মশানে তরুণ দাস নামের এক ব্যক্তির হত্যা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার ভোর রাতে নিহত হওয়া এই ব্যক্তিকে কিছু গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ শ্মশানের পুরোহিত বা সেবাইত বা পাহারাদার হিসেবে উল্লেখ করায় এই রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নাটোর জেলা শাখা ঐসব যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ দাসকে পুরোহিত বা সেবাইত বা পাহারাদার উল্লেখ করে খবর প্রচার করার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে তরুণকে মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ দাসের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে সংশোধন বিবৃতি প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছি। আসলে কাশিমপুর মহাশ্মশানটি এতটা নির্জন এলাকায় যে নাইটগার্ড থাকলেও চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কেউ আসলে তার ভাগ্যেও তরুণের মত ঘটনাই ঘটতো।

কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ণ রায় টিপু বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাস ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন। প্রায় প্রতিরাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। নাটোর পৌরসভার অর্থায়নে শ্মশানে চার কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ ছিলেন না। পরজীবনের মঙ্গল চিন্তায় শ্মশানে রাত কাটাতেন। শনিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মহাশ্মশানে ঢুকে ভবঘুরে তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ভাণ্ডার কক্ষ থেকে কাঁসার পাতিল, গামলাসহ অনেক মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।

নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তরুণ দাসকে শ্মশানে রাত্রিযাপন না করার অনুরোধ জানালেও তিনি শোনেননি। নিজের মতো করেই তিনি জীবনযাপন করতেন।
নিহতের ভাই প্রদীপ দাস জানান, তরুণ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিল। একই কথা বলেছেন একই এলাকার বাসিন্দা আশীক রহমান।

নিহতের ছেলে তপু কুমার দাস বলেন, বাড়িতে বাবা আসতেন, অনেকদিন দুপুরের খাবার খেতেন, তার প্রিয় নাতনি ছোট্ট তিন্নির সাথে খেলতেন, চলে যেতেন। ঠান্ডা শীতের রাতে শ্মশানের বারান্দায় রাত কাটানোর ব্যাপারে বাবা বলতেন, আমার শীত লাগে না। ঐ এলাকার সবাই তাকে শ্মশান বাবু নামেই জানতেন। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী।

প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাকে নাটোর শহরের সকল মানুষই চিনতো। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। অনেক সময় সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো, বুঝে নিতাম ১০/২০ টাকা চা খাওয়ার আবদার। অনেক সময় কুকুরের সাথে খেলা করা, কুকুরের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি।

নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ কুমার দাসের হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। খুব দ্রুত হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে সিআইডি এবং ক্রাইমসিন ইউনিট এসেছে। জেলা পুলিশও কাজ করছে।

পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন বলেন, আসামিদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে নাটোরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তরুণ দাস (৫৮) নামে এক ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তরুণ দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে। তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।

ইএইচ