ফুলেন্নেছা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৫:১৭ পিএম
ফুলেন্নেছা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে  স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

সুনামগঞ্জের নবগঠিত  মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া ফুলেন্নেছা মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্য ও নরমাল ডেলীভারি ও শিশু সেবা কার্যক্রম প্রায় এক বছর যাবত  বন্ধ রয়েছে।

এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র সহকারী নার্সিং অ্যাটেন্ডেন্ট গত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অন্যত্র বদলি হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা নিরাপদ প্রসব নিয়ে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

উপায় না থাকায় এসব অন্তঃসত্ত্বা মা দেরকে বাধ্য হয়ে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ প্রসবের জন্য ১৪ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে। এতে করে  ব্যাহত হচ্ছে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুইটি ইউনিয়নের অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া এলাকায় ৫০ শতক জমিতে ২০১৩ ইং সালে স্থাপিত হয় ফুলেন্নেছা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি। যা বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ও পার্শ্ববর্তী বংশীকুণ্ডা উত্তর এই দুইটি  ইউনিয়নের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ক্ষুদ্র পরিসরে চালু হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন ফ্যামিলি মেটারনিটি অ্যাটেনডেন্ট (এফএমএ), ৩ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন অফিস সহকারী, ১ জন অফিস সহায়ক, ২ জন নাইটগার্ডের ন্যূনতম পোস্ট থাকলেও বর্তমানে এখানে মাত্র একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া ও একজন নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কোনো লোকবল নেই। নৈশ প্রহরীও দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে রয়েছেন ছুটিতে।

পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ না থাকলেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এমসিএইচ ইউনিট থেকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী নার্সিং অ্যাটেন্ডেন্ট সূর্যমণি আক্তার এতদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন এ কেন্দ্রটিতে নিয়মিত অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা সহ নরমাল ডেলিভারি সেবা কার্যক্রম চালু ছিল। এতে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত ওই এলাকায় মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা পেত সকল শ্রেণির  জনসাধারণ। কিন্তু সূর্যমনি আক্তার গত ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে প্রায় এক বছরের অধিক সময় ধরে  অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের  গর্ভকালীন স্বাস্থ্য ও নরমাল ডেলিভারি সেবা বন্ধ রয়েছে এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্তমানে শুধু একজন ফার্মাসিস্ট কর্মরত রয়েছেন। এতে মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম বিশেষ করে নরমাল ডেলিভারি সেবা পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে।

বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের কালাগড় গ্রামের গৃহবধূ মনোয়ারা আক্তার বলেন, দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সন্তানসম্ভবা মায়েদের অন্য উপজেলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর নবী তালুকদার বলেন, গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ প্রসবের কথা বিবেচনা করে দ্রুত এখানে একজন দক্ষ প্রসব সেবাদানকারী পদায়ন করা জরুরি দরকার। 
মধ্যনগরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। এ উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম পাশের ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পরিচালিত হয়।

ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মা ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান রনি বলেন, এ বিষয়টি লিখিতভাবে একাধিকবার  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দুইজন মিডওয়াইফ যোগদানের কথা ছিল গত অক্টোবর মাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ যোগদান করেনি। মধ্যনগর উপজেলার এমনিতেই যোগাযোগ  ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে পিছিয়ে রয়েছে। ওই উপজেলায় এখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন হয়নি। ফুলেন্নেছা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটিতে অন্তত দুইজন মিডওয়াইফ নিয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রটিতে নরমাল ডেলিভারি সেবা কার্যক্রম চালু করতে আমি চেষ্টা করছি।

বিআরইউ