ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পতিত ফ্যাসিবাদের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয় গেলেও এখন সিলেটের ক্রীড়াঙ্গণে এখনও তার দোসর ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে।
তারা অত্যন্ত সুকৌশলে সিলেটে কর্মরত জুলাই বিপ্লবের সাংবাদিকদের সাথে দূরত্ব তৈরি করে আসন্ন জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি অসফল করার চক্রান্তে নেমেছে। আর এতে ইন্ধন রয়েছে নাদেলের ঘনিষ্ঠ কিছু বিসিবি কর্মকর্তাদের।
বিষয়টি নিয়ে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গণ ও সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চারপাশে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া সিন্ডিকেট গত ১৭ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। এই আধিপত্যের কেন্দ্রে রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাবার পরেও নাদেল সিন্ডিকেটের দাপট এবং তাদের নেটওয়ার্ক নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যবস্থাপনায় ভেন্যু ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন জয়দীপ দাস সুচুক। জুলাই ও আগস্ট বিপ্লবের সময়ের ছাত্রজনতার বিপক্ষে তার ভূমিকা ছিল। বিগত ৫ আগস্ট গণবিল্পবের পর তার বিরুদ্ধে মামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। তার সহকারী মনজ কান্তিও একই পথের পথিক। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে আছেন মো. ইকরাম চৌধুরী।
মিডিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছেন ফরহাদ কোরেশি এবং সৈয়দ কাবি। আর এই স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে জিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।
সিলেটের দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিপ্লবের পর বিসিবি ও সিলেটের রাজনৈতিক নেতাদেরকে ভুল বুঝিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদেরকে এখনো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের দায়িত্বে বহাল রাখা হয়েছে। তারা এখানে বসে বসে দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত করছে। সরকারের কোন ইভেন্টই যাতে সফলভাবে সম্পন্ন না হয় তারা সেই দিকেই কুটচাল করছে। এমনকি আসন্ন জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত সময়েও তারা যেকোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। যার জন্য তাদেরকে এখনই ক্রীড়াঙ্গণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রথম বিভাগের কোচ হিসেবে রানা মিয়া প্রথম বিভাগের ক্রিকেট টিমের কয়েকটি টিমের একক আধিপত্য ছিল। ফরচুন গার্ডেনের মালিক জুয়েলও এই নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিলেট মহিলা ক্রিকেট টিমের সাবেক কোচ তপন মালাকারের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেটের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। গ্রিন সিলেট নামক অ্যাকাডেমির কোচ রিংকু, নাছির এবং কয়েকজনও এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য হিসেবে বহুল পরিচিত।
৫ আগস্টের পর শুকুর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ মুনাজিরও এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।
এদিকে, সিলেট স্টেডিয়ামকে ঘিরে নাদেল সিন্ডিকেটের দাপট এবং বিতর্কিত নিয়ে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে ক্রিকেট কোচিং ও অন্যান্য কার্যক্রম পর্যন্ত নাদেলে সিন্ডিকেটের আধিপত্য এখনো সুস্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিগত ১৫ বছর থেকে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গণে অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করে রাখা একজন ক্রীড়াবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নাদেল সিন্ডিকেট সিলেটের দুটি স্টেডিয়াম যেভাবে এখনো নিজেদের দখলে রেখেছে তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সিলেটের ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্যও ক্ষতিকর। আমাদের যুবকেরা যে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা সবাই জানে। আমরা চাই, প্রশাসন এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করুক এবং সিলেটের উন্নতির জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হোক।
তবে বিষয়টি নিয়ে সিলেটে বিসিবির দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে চাননি।
ইএইচ