মানবিক-আদর্শিক-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষকদের ৫ দফা

বরগুনা প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম
মানবিক-আদর্শিক-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষকদের ৫ দফা

মানবিক-আদর্শিক-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষক সমাজের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বরগুনার সৈয়দ ফজলুল হক কলেজের শিক্ষকগণ সংবাদ সম্মেলন করেন। 

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

পাঁচ দফা লিখিত দাবিনামা উত্থাপন করেন সৈয়দ ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মো. জিয়াউল করিম। 

দফাগুলো হলো— 

১.বাংলাদেশকে একটি ‍‍‘শুদ্ধতম গণতন্ত্রের দেশে‍‍’ পরিণত করা। 

২.বাংলাদেশের জন্য আগামী কমপক্ষে শত বছরের উপযোগী রাজনৈতিক- সামাজিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ রূপরেখার অলঙ্ঘনীয় চূড়ান্ত দলিল সৃষ্টি করে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করা যা বিশ্বব্যাপী ‍‍ ‘শুদ্ধতম গণতন্ত্রের চুক্তি‍‍’ হিসেবে পরিচিত হবে।

৩.সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সাধারণ জনগণকে রাষ্ট্রের ‍‍‘এক্টিভ সুপ্রিম অথরিটি‍‍’ বা ‍‍‘সক্রিয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল কর্তৃপক্ষ‍‍’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

৪.ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ভিত্তিক মূল্যবোধ পরিপূর্ণ সমুন্নত রাখতে এবং ‍‍‘মানবিক-আদর্শিক-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ‍‍’ গড়তে আঞ্চলিক নাগরিক কমিটির মাধ্যমে অঞ্চল ভিত্তিক আগামী শত বছরের। 

৫. উপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা এবং রাষ্ট্রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি স্তরের উন্নয়নকে তরুণ-যুবক এবং অভিজ্ঞ নাগরিকদের মাঝে একটি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত করা।

শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, শুদ্ধতম গণতন্ত্রের দেশ বাংলাদেশ‍‍`থেকে উক্ত পাঁচ দফা সংকলন করেছেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়ার সৈয়দ ফজলুল হক কলেজ কর্তৃক প্রকাশিত খোলা চিঠি হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমানে প্রেক্ষাপটে শিক্ষক সমাজের গবেষণার ফলশ্রুতিতে রচিত এই খোলা চিঠিতে প্রতিটি দফার বিস্তারিত আলোচনা এবং এই ৫ দফা প্রতিষ্ঠার কৌশলপত্র বর্ণিত হয়েছে।

তাঁরা আরো বলেন, আমরা মুসলিম জাতি বিশ্বাস করি, ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করা প্রতিটি সন্তানই ঐশ্বরিক আশীর্বাদপ্রাপ্ত, মেধাবী এবং সৃষ্টিকর্তার বিশেষ নূর প্রাপ্ত। আমাদের দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হাফেজ তৈরি হচ্ছে, মেধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু এই মেধার মূল্য কি আমরা দিতে পারছি? আমাদের হাফেজ সন্তানরা চাকুরি হিসেবে পায় মসজিদের ইমামতি কিংবা মোয়াজ্জিনের চাকুরি, তারাবি নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব, অনেক ক্ষেত্রে মাদ্রাসা, মক্তবের শিক্ষকতা কিংবা আরবি প্রাইভেট পড়িয়ে জীবন পার করতে হয়। কারণ হাফেজী পাশ করা আমাদের সন্তানদের অনেক ক্ষেত্রেই শুদ্ধভাবে বাংলা এবং ইংরেজি পড়া বা লেখার জ্ঞান। থাকে না। ফলশ্রুতিতে উচ্চ শিক্ষা/টাইটেল পড়ার জন্য যারা অর্থ সংগ্রহ করতে না পারে তারা ঐ অসীম মেধা নিয়ে ছোটখাট কোন কাজ করে জীবন নির্বাহ করতে বাধ্য হয়।

পরবর্তী সুপার সাইন্সের যুগে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন হবে অসংখ্য মেধাবী বিজ্ঞানী। বিভিন্ন সেক্টরের গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে যে তীক্ষ্ণ মেধাবী সন্তান প্রয়োজন তা সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশের জন্য আগেই প্রস্তুত করে রেখেছেন। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বাংলাদেশের এই অফুরন্ত মেধাবী সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালনা করা। আর এভাবেই আমাদের দেশের সম্মানিত হাফেজগণকে রাষ্ট্রের জন্য শ্রেষ্ঠ মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।

কৌশলপত্রে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে ক্যাডেট কলেজের আদলে মোট ১৩ টি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

উক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রথম শর্তই হবে কোরআনে হাফেজ হওয়া। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে পরিপূর্ণ আবাসিক ও সর্বোন্নত প্রযুক্তি সংযুক্ত করে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হবে। ৫ম শ্রেণির সমপর্যায়ের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের জ্ঞান অর্জন করিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে এ সকল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পাঠক্রম শুরু করতে হবে।

প্রতিটি হাফেজ সন্তান ইসলাম ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবে। কিন্তু প্রত্যেককেই বাংলা, ইংরেজি, গণিত আর বিজ্ঞানের চূড়ান্ত জ্ঞান গ্রহণের মাধ্যমে গবেষক/বিজ্ঞানী হিসেবে তৈরি হয়ে আগামীর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সেরা ব্যক্তিত্বে পরিণত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বরগুনা নিউ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোহাম্মদ জুলফিকার আমিন বাবু।

উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ ফজলুল হক কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিপ্লব চন্দ্র শীল, মো. ছগীর মিয়া, ভাস্কর রঞ্জন, মো. আব্দুল হক, মো. মহিবুর রহমান, মো. জিয়াউল করিম, মো. জাকির হোসেন, মো. আল আমিন, মো. কায়ফাউস স্বপন, ঝালকাঠির আবদুল মালেক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জহির উদ্দিন মো. বাবর, চান্দখালী মোশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মহসীন খান প্রমুখ।

বিআরইউ