দীর্ঘ ৩ বছর ধরে খুলনা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সদর থানার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ওসির বাসভবনে। সংকীর্ণ স্থানে কোনো মতে চলছে সেবা প্রদান। এতে দুর্ভোগে পুলিশ ও সেবা গ্রহীতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুটি টেবিলকে একত্রিত করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন তিন পুলিশ সদস্য। তাদের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন নথিপত্র। পাশেই সেবা প্রত্যাশীদের অপেক্ষা।
বিভাগীয় শহর খুলনার সব থেকে ব্যস্ততম সদর থানার ভেতরের চিত্র এমন। ঘিঞ্জি পরিবেশে জোড়াতালি দিয়ে চলছে থানার কার্যক্রম। দুইতলা বিশিষ্ট দুই হাজার বর্গফুটের এই ভবনটি ছিল এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাসভবন।
থানা সূত্র বলছে, ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ৪১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ১৩ হাজার ৩৩২ বর্গফুটের দুইতলা বিশিষ্ট থানা ভবন। তবে মাত্র ২৯ বছরের ব্যবধানে ভবনটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত হওয়ায় ২০২১ সালের জুনে ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকেই ওসির বাসভবনে নেয়া হয় থানার সব কার্যক্রম। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পুলিশ ও সেবা গ্রহীতাদের।
থানায় পরামর্শ নিতে আসা হাসান শেখ বলেন, সদর থানা আমাদের মূল থানা হিসেবে মনে করি। কিন্তু এই থানাটায় গেলে, পুলিশের ভোগান্তি দেখা যায়। আমরা একটা সেবা নিতে গেলে অনেক সময় দেখা যায় পুলিশও দাঁড়িয়ে থাকে আমরাও দাঁড়িয়ে থাকি। একটা জিডি করতে গেলে অনেকটা সময় তাদের নিজেদের বসার জায়গা থাকে না সেখানে আমরা কি করে বসি? এই জনদুর্ভোগ, মনঃক্ষুণ্ণতা ও জরাজীর্ণ পরিবেশ থেকে আমরা মুক্তি চাই। খুলনায় একটি মডেল থানা হওয়া উচিত। এখনও আমরা এর থেকে বঞ্চিত।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে খুলনা সদর থানা হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি ব্যবহারে অনুপোযোগী হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ভেঙে ফেলা হয়। সেই থেকে খুলনা থানার কার্যক্রম থানার ওসি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটিতে পরিচালিত হয়ে আসছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ থানা এটি। এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষকে সেবা দেয়া হয়। একটি বাসভবনকে থানা হিসেবে ব্যবহার করে সরকারি এবং জনসেবার কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ব্যাপার। এখানে স্থান-সংকুলানের অভাবে জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে অফিসার ফোর্সের ব্যারাক না থাকায় তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ কারণে আমাদের নতুন থানা ভবন নির্মাণ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, মানহীন ভবন নির্মাণের কারণে মাত্র ২৯ বছরে পরিত্যক্ত হয়েছে আগের থানা ভবন।
সামাজিক সংগঠন গ্লোবাল খুলনার আহ্বায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন বলেন, ১৩ হাজার বর্গফুটের পূর্বের থানা ভবনটি মাত্র ২৯ বছরে ভেঙে পড়ল, এটা আমার কাছে বিস্ময়কর। যদি লবণ আবহাওয়ার দোহাই দেন এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এই শহরে শত বছর পুরনো ভবনও রয়েছে। এটা ঠিকাদারের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। যে ঠিকাদারই থাকুক, সে জঘন্য কাজটি করেছে। যার কারণে মাত্র ২৯ বছরে একটি থানা ভবন ভেঙে ফেলতে হলো। মাত্র ২ হাজার বর্গফুটের ওসির যে বাসভবন সেখানে পুরো থানার কার্যক্রম চলছে। এখানে পুলিশ সেবা দিবে কীভাবে? সাধারণ মানুষ এসে বসবে সেই জায়গাও নেই।
তিনি আরও বলেন, একটা সংকীর্ণ জায়গা পুলিশও চরম দুর্ভোগে আছে জনগণ তো আছেই। পুলিশ যদি ঠিকমতো সেবা দিতে না পারে, জনসাধারণ যদি সেবা নিতে না পারে, তাহলে একটা নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি টোটালি ভেঙে পড়ে। তাহলে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার স্বার্থে ও পুলিশকে স্বস্তি দেয়ার স্বার্থে, অতি দ্রুত পুলিশের একটা অত্যাধুনিক ভবন তৈরি করা জরুরি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার বিএম নুরুজ্জামান বলেন, সদর থানাতে আমরা খুব শিগগিরই কাজ শুরু করব। ইতোমধ্যে গণপূর্তের ইঞ্জিনিয়ার ডিজিটাল সার্ভে করেছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। খুলনা সদর থানার অফিসার ফোর্সদের আবাসন এবং তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম যাতে সুন্দরভাবে করতে পারে সেটার ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি হবে। খুলনা সদর থানায় ৭৮ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত।
ইএইচ