কিশোরগঞ্জে ১লক্ষ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
কিশোরগঞ্জে ১লক্ষ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ

বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় পুরোদমে চলছে বোরো আবাদের কাজ। চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করতে কৃষকদের চলছে কর্মযজ্ঞ। 

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো চাষে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে এবার রেকর্ড পরিমাণ ধানের উৎপাদন হবে। এ বছর প্রায় ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে আশা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৩টি উপজেলার সবকটিতেই বোরো আবাদ হলেও ভূপ্রাকৃতিক কারণে হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, তাড়াইল, ভৈরব, কুলিয়ারচর, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর এবং নিকলী উপজেলায় সর্বাধিক পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদিত হয়। এলাকার অধিবাসীদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এ বোরো ফসল। তাই এখানকার কৃষক নিজেকে উজাড় করে দেন বোরো আবাদে। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনার মধ্যেও কৃষককে ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতে হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী-এ চারটি উপজেলা হাওর অধ্যুষিত। হাওর অধ্যুষিত এ চার উপজেলায় মোট আবাদি জমি রয়েছে প্রায় এক লাখ হেক্টর। 

চলতি মৌসুমে ইটনায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৪০০ হেক্টর, মিঠামইনে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর, অষ্টগ্রামে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ১৭০ হেক্টর, নিকলীতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর, হোসেনপুরে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১৩০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জ সদরে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ২৩৫ হেক্টর, কটিয়াদীতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর, করিমগঞ্জে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর, তাড়াইলে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর, বাজিতপুর বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৪৫৫ হেক্টর, কুলিয়ারচরে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৫৬৫ হেক্টর ও ভৈরবে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৯১০ হেক্টর।

হাওরের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদকৃত ধানের মধ্যে স্থানীয় জাত, উফসী এবং হাইব্রিড জাতের ধান রয়েছে। তবে এ বছর উফসী ও হাইব্রিড ধানের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে।

জানা যায়, জেলার ১৩টি উপজেলার সবকটিতেই বোরো আবাদ হলেও ভূ-প্রাকৃতিক কারণে হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং নিকলী উপজেলায় সর্বাধিক পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদিত হয়। প্রাকৃতিক কোন দৈব-দুর্বিপাকে না পড়লে হাওরে প্রতি বছরই বাম্পার বোরো ফলনের সম্ভাবনা থাকে। তবে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনার মধ্যেও কৃষককে ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতে হয়। আগাম বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে প্রায় সময়েই মাঠভর্তি কৃষকের সোনালী ধান তলিয়ে যায়। এত ঝুঁকির মাঝেও এখন হাওরের মাঠে সরব পদচারণায় মুখর কৃষকের একটাই চিন্তা, এক খণ্ড জমিও যেন কোন অবস্থাতেই পতিত না থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বছর কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আশা করি সরকার থেকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশি ফলন আমরা পাব।

বিআরইউ