পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার

মো. আবদুল হালিম, কক্সবাজার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ১১:১৭ পিএম
পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার

ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে পর্যটকে মুখর কক্সবাজার।

সমুদ্র সৈকতে শীতের ছোঁয়ায় রাতের মৌনতার মাঝে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে নতুন বছরের পরিকল্পনা আর পুরনো বছরের স্মৃতি রোমন্থন করা মহানন্দের।

আজ ৩১ ডিসেম্বর চলতি বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে এবং ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা সৈকতে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠেছে।

থার্টিফার্স্ট নাইট উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও কক্সবাজারে নেমেছে পর্যটকদের ঢল।

থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে প্রশাসনের কোনো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেই। ফলে সৈকত এবং অন্যান্য খোলা স্থানে অনুষ্ঠান, আতশবাজি ও কনসার্ট বন্ধ থাকবে।

তবে তারকামানের হোটেলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রাম আয়োজন করছে। যেখানে অতিথিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিশেষ ডিনারের মাধ্যমে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে হোটেলের অতিথি, বিদেশি পর্যটক এবং বিশেষ মেহমান ব্যতীত এসব অনুষ্ঠানে অন্যদের প্রবেশ করার তেমন সুযোগ নেই।

এদিকে, থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ বাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক মালিক পক্ষ আশা করছেন, এবার থার্টিফার্স্ট উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে পাঁচ লাখেরও বেশি পর্যটকের সমাগম হবে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। এবারও থার্টিফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে পাঁচ লাখেরও বেশী পর্যটক সমাগম হবে। উন্মুক্ত আয়োজন না থাকলেও মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে এতে করে এখন পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে চাঙ্গা ভাব ফিরেছে বলে অভিমত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের।

সৈকতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সাগরপাড়ে যেদিকে তাকাই সেদিকেই মানুষ আর মানুষ। সৈকতে এসে পর্যটকরা উৎসবে মেতেছে। বেশিরভাগ নারী-পুরুষ সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসলে ব্যস্ত। অনেক পর্যটক বালুচরে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন, কেউ সৈকতে সাজানো ছাতায় বসে শীতল হওয়া উপভোগ করছেন, কেউ জেট স্কিতে চড়ে ঘোরাঘুরি করছেন, কেউ ঘোড়া ও বিচ বাইক নিয়েও ছুটতে দেখা যায়। সৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে দিতে দায়িত্ব পালন করছে তিন শতাধিক পেশাদার আলোকচিত্রী।

পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধ্যা পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাটুয়ার টেক, ইনানী, রামু বৌদ্ধবিহার সহ দর্শনীয় স্থানগুলো। সমুদ্রে মানুষের আনাগোনা যতো বাড়ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে লাইফগার্ড কর্মীদের কর্মতৎপরতা। সৈকতের এক পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্টে ছুটে যাচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। হোটেল মালিক সূত্রে পাওয়া, শহরে পাঁচ শতাধিক হোটেল রিসোর্ট গেস্টহাউস কটেজের কোনো কক্ষ খালি নেই। বুকিং না দিয়ে চলে আসায় অনেকে এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঁচ-সাতজন করে থাকছেন।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন পর্যটন মওসুম তার উপর কয়েকদিন পরেই থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে এখন পর্যটককে ভরপুর। এবারে সব মিলিয়ে ৫লাখেরও বেশি পর্যটক আসবে বলে আশা করা যায়।

কক্সবাজারে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা ঢাকার পর্যটক দম্পতি জানান, প্রায় এক মাস আগে থেকে হোটেল বুকিং করেছি। প্রতিবারই এ সময়টা পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসি। এবারে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে খুব মজা হবে। উম্মুত্ত কোন আয়োজন না থাকলেও হোটেলে অনুষ্ঠানমালা যোগ দেবো বলে জানান তিনি। সিলেট থেকে আসা ৫বন্ধু জানান, থার্টি ফাস্ট পালন করতে কক্সবাজার বেড়াতে আসা। সৈকতে মানুষের কোলাহল খুব ভালো লাগে। এর মধ্যে বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন পর্যটন স্পট গিয়েছি। থাকবো আরো বেশ কয়েকদিন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তা ছাড়া আতশবাজি, পটকাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন স্থানের বারও বন্ধ রাখা হবে।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ভ্রমণে এসে কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে, যাতে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে সৈকতে ঘুরতে পারেন। বিশেষ করে থার্টিফার্স্ট নাইটের দিন কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের প্রতিটি মোড়ে তল্লাশি করা হবে বলে জানান।

ইএইচ