মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাশঁবাড়িয়া গ্রামের যুবদলের নেতা আলমগীর হোসেন (৩৫) নামে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় দুই যুবদল নেতাসহ তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে মেহেরপুর সিপিসি-৩ র্যাব-১২ এর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) বিকেল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো গাংনী পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও চৌগাছা গ্রামের রইস উদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলাম বিপ্লব (৩৬), গাংনী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডৈর এক নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বাঁশবাড়িয়া পশ্চিম পাড়ার আব্দুল আউয়ালের ছেলে মফিকুল ইসলাম (৩৯), এবং একই উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের কোদাইলকাটি গ্রামের জামাত আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন (৪০)।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কমান্ডার আশরাফউল্লাহ পিপিএম মেহেরপুর সিপিসি-৩ র্যাব-১২ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মারফত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে আসামি মফিকুল ইসলামের নিকট থেকে গাংনী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড বাঁশবাড়িয়া পশ্চিমপাড়ার আলমগীর হোসেন ০২ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করে নাই। আলমগীর হোসেন টাকা পরিশোধের আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যায়। আনুমানিক প্রায় তিন মাস আগে আলমগীর হোসেন দুবাই থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। আলমগীর হোসেন বাড়িতে আসার পর মফিকুল ইসলাম একাধিকবার তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলেও সে টাকাটা পরিশোধ না করে নানান টালবাহানা করে আসছে। ঘটনাটি শুরু থেকেই আসামি মফিকুল তার বন্ধু আসামি রবিউল ইসলাম বিপ্লবকে জানায়। আসামি বিপ্লব এবং আসামি আলমগীর (কোদালকাটি) একাধিকবার আলমগীর হোসেনের নিকট হতে আসামি মফিকুলের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
গত তিনদিন আগে আসামি মফিকুলের সাথে আলমগীর হোসেনের টাকা পরিশোধ করাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হয়। তখন থেকেই আসামীরা আলমগীর হোসেনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) রাত ৯ টার দিকে আলমগীর হোসেন কে হত্যা করে ঘটনাকে অন্য দিকে (পরকীয়া) রূপ দেওয়ার জন্য আসামি বিপ্লবকে গাংনী বাজারের থানা রোডে অবস্থিত তার দোকানে বসে নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট। যা আলমগীর হোসেনকে হত্যার পর লাশের পাশে ফেলে রেখে আসে তারা।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি আরো বলেন ঘটনার দিন বিকেলে আসামি বিপ্লবের দোকানে আলমগীর হোসেন যায় এবং তার সাথে আড্ডা দেয়। ইতোপূর্বে আলমগীর হোসেন তার বন্ধু আসামি বিপ্লবের নিকট টাকা ধার চেয়েছিল। আসামি বিপ্লব তাকে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে গত ০১ জানুয়ারি তারিখে সন্ধ্যায় নিজ বাসায় নিয়ে যায়। পরে আসামি মফিকুল তার মোটরসাইকেলে করে আসামি বিপ্লব ও আলমগীরকে মড়কা বাজারে নিয়ে যায়। মড়কা বাজারে পূর্বে থেকে অবস্থানরত আসামি আলমগীর ( কোদালকাটি) ও তার একজন সঙ্গীকে আলাদা একটি মোটরসাইকেলে করে আলমগীর হোসেনসহ মোট পাঁচজন ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে আসামীরা মফিকুলের নিকট হতে ধার নেওয়া টাকা কেন ফেরত দিচ্ছে না এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আসামি আলমগীর (কোদালকাটি) তার শার্টের নিচে লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া দা দিয়ে আলমগীর হোসেনের মাথায় আঘাত করে এবং সবাই মিলে ভিকটিমের মুখ ও হাত পা বেঁধে ফেলে। আসামি বিপ্লব ও আসামি মফিকুল আলমগীর হোসেনকে ধরে রাখে এবং আসামি আলমগীর (কোদাইলকাটি) তার সঙ্গীয় অন্য আসামিসহ আলমগীরকে দা দিয়ে জবাই করে। পরবর্তীতে সোহড়াবাড়িয়া- কামারখালী কাঁচা রাস্তার পাশে ড্রেনের মধ্যে তারা লাশ ফেলে পাশে হাতে লেখা চিরকুট রেখে ঘটানাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ফেরার পথে ঘটনাস্থল হতে আনুমানিক ৪ কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশের ঢালে আলমগীরকে জবাই করার কাজে ব্যবহৃত দা ফেলে আসে বলে আসামি বিপ্লব স্বীকার করে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণে ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি থাকাসহ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে।
উদ্ধারকৃত আলামত ও গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মেহেরপুর জেলার গাংনী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা মহিউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গাংনী থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৪ তারিখঃ ০৩/০১/২০২৫ ইং
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মেহেরপুর জেলায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে র্যাব এজাহারনামীয় আসামীদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারিসহ গ্রেফতারের কাজ শুরু করেন। যার ফলশ্রুতিতে বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) র্যাবের টিম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে হত্যামামলার তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করেন।
আরএস