যশোরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট

এম এ রহমান, যশোর প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম
যশোরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট

যশোরে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা ও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

যশোর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের ৫৭৭টি পদ খালি রয়েছে। এ পদগুলো শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে।

৩৩১ সিনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে নিয়োগযোগ্য পদ শূন্য রয়েছে ২৪৬টি। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। শিক্ষক সংকট দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস শিক্ষা কর্মকর্তার।

যশোর শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় এক হাজার ২৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ৭ হাজার ২৮৩টি অনুমোদিত সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছে ৬ হাজার ৭০৬ জন। ফলে বর্তমানে ৫৭৭টি পদশূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ৩৩১ জন সিনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত সিনিয়র সহকারী শিক্ষকের ওই পদে নতুন করে লোকবল নিয়োগের সুযোগ নেই।

সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্য খালি পদ রয়েছে ২৪৬টি। এতে সংকট আরও বাড়ছে।

সহকারী শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে সদর উপজেলায় ১৩৩টি। এর মধ্যে চলতি দায়িত্ব পালন করছে ৫৩ জন। ফলে নিয়োগযোগ্য পদের সংখ্যা ৮০টি।

শার্শা উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদশূন্য ৫১টি। এর মধ্যে চলতি দায়িত্ব পালন করছে ৩৫ জন। ফলে নিয়োগ যোগ্যপদের সংখ্যা ১৬টি।

মনিরামপুর উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদশূন্য ১১৩টি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকে দায়িত্ব পালন করছে ৭৭ জন। ফলে নিয়োগ যোগ্য পদেও সংখ্যা ৩৬টি।

বাঘারপাড়া উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদশূন্য ৪৮টি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকে দায়িত্ব পালন করছেন ৩১ জন। ফলে নিয়োগযোগ্য পদের সংখ্যা ১৭টি।

ঝিকরগাছা উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৬৯টি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকে দায়িত্ব পালন করছে ৩৫ জন। ফলে নিয়োগযোগ্য পদের সংখ্যা ৩৪টি।

চৌগাছা উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৩৭টি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকে দায়িত্ব পালন করছে ৩১জন। ফলে নিয়োগ যোগ্য পদের সংখ্যা ৬ টি।

কেশবপুর উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৮৫টি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে ৪২ জন। ফলে নিয়োগ যোগ্য পদের সংখ্যা ৪৩টি।

অভয়নগর উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৪১টি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকে দায়িত্ব পালন করছে ২৭ জন। নিয়োগ যোগ্য পদের সংখ্যা ১৪ টি।

এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর, ঘোপসেনা, রঘুরামপুর, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে তিন থেকে চার জন শিক্ষক দিয়ে। অথচ যেখানে প্রয়োজন পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষকের।

এ সব বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজে প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রায়ই উপজেলা সদরে যেতে হয়। এ সময় একজন শিক্ষককে একসঙ্গে দুটি শ্রেণিতে পড়াতে হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ব্যাহত হয় বিদ্যালয়ের গোটা শিক্ষা কার্যক্রম। এ সমস্যার যত দ্রুত সমাধন হবে, বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার ভালো হবে বলে শিক্ষকরা মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সভা, প্রতিবেদন তৈরি ও দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। প্রধান শিক্ষক না থাকলে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ করে সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া শিক্ষক সঙ্কটে কারণে তাদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, সকল বিদ্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই সিনিয়র সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে সহকারী শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ইএইচ