ঢাকা নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে, টিকরপুর এলাকায় চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাওয়া যাবে অসংখ্য সরিষা ক্ষেত।
অপরদিকে সরিষা ফুলের চারপাশে মৌমাছিদের আনাগোনা গুনগুন শব্দে গান যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। মৌচাকের ছোট ছোট ঘরগুলো মধুর রসে পরিপূর্ণ করছে। দেখা যাবে সরষে ফুলের মধু সংগ্রহে মত্ত অসংখ্য মৌমাছির দল। ঝাঁক বেঁধে অবিরাম কাজ করছে।
একদল আসছে তো অন্যদল যাচ্ছে। কোনো ক্লান্তি নেই। প্রতিদিন ২৫ বাক্সে তৈরি হচ্ছে মধু। পাড়া-প্রতিবেশী ছেলে-বুড়ো সবাই উপভোগ করেন মৌমাছির মধু সংগ্রহের কাজ। ফলে সমন্বিত এই চাষে লাভবান হচ্ছেন সরিষা ও মৌচাষি উভয়ই।
এই গল্প ঢাকার নবাবগঞ্জের শিক্ষিত চাষি মুহাম্মদ তানভীর শরীফের মৌ বাগানের। তার বাড়ি উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের আলগীর চর গ্রামে। ঢাকা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে টিকরপুরে তার বাগানটির অবস্থান।
৭ ভাইবোনের সংসার। ভাইবোনরা তাকে এ বিষয়ে সহায়তা করেন। তানভীর শরীফ জানান, ২০০৮ এইচএসসি পাসের পর ব্যবসায়ক ভাবনা থেকে মধু চাষের ওপর সরকারিভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া তিনি মধু চাষের বিশেষ পদ্ধতি, বাক্স বানানো এবং রানি মৌমাছি দিয়ে কীভাবে মধু চাষ করা যায় এবিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে মধু রানি পোকা এবং মধুঘর (বাক্স) ও আনুষঙ্গিক উপকরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। এরপর মধু সংগ্রহের জন্য সরষে ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স বসান। এই বাক্সগুলোতেই প্রতিদিন মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এনে জমা করছে। চলমান মৌসুমে নিজস্ব পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত খামার থেকে ৮ মণ মধু উত্তোলন করে ৫ মণ বিক্রি করেছেন বলে জানান তানভীর শরীফ।
তিনি সংগৃহীত মধু কেজি প্রতি সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মূল্যে বিক্রয় করেন। এভাবে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
তানভীর শরীফ জানান, মধু নিয়ে বাণিজ্যিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি লিচু, ধনিয়া ও হাওরের পদ্মফুলের মধু এবং আনারস বাগানের ফুলের মধু চাষ করবেন বলে জানান। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে টাকার প্রয়োজন তাই একটু সময় লাগবে এমনটাই দাবি তার।
মধু চাষ ও আহরণ সম্পর্কে মুহাম্মদ তানভীর শরীফ জানান, একটি কলোনিতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক মৌমাছি থাকে। কিন্তু মৌরানী থাকেন একজন। শ্রমিক মৌমাছিগুলো সারাদিন মধু সংগ্রহ করেন। ১১টি কলোনি থেকে ৭ দিনে ১০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, এ বছর নবাবগঞ্জে ৩ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। নবাবগঞ্জে দুজন মৌচাষি রয়েছেন।
তিনি বলেন, সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহের ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পায়। মধু সংগ্রহের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তিনি আরও বলেন, তানভীরকে দেখে অন্য যুবকেরা এই পেশায় এগিয়ে আসলে তারাও স্ববলম্বী হতে পারবে। এছাড়া দেশের বেকারত্ব কমে যাবে।
ইএইচ