ভাঙ্গুড়ায় শর্ষে-মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান সব পক্ষ

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০১:০৭ পিএম
ভাঙ্গুড়ায় শর্ষে-মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান সব পক্ষ

শর্ষে খেতের পাশে মধু সংগ্রহের জন্য মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। ভাঙ্গুড়ায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শর্ষে খেতে ফলন আসায় এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এসব খেতের পাশেই মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে।

এর ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভাঙ্গুড়া উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়ায় এ বছর ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০টি মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি। চলতি মৌসুমে ১লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।

শনিবার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শর্ষে খেত। পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন  (রমজান)। পাশের পরমান্দপুর মাঠে তাঁর আরও একটি মৌমাছির খামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌবাক্স রয়েছে। তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।

সফিকুল ইসলাম বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি রামনগর  মাঠে মৌবাক্স বসিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে ৪ বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে সাত থেকে আট কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। শর্ষে খেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।

মৌবাক্সের ফ্রেম থেকে যন্ত্রের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সাতক্ষিরা এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ছয় বছর ধরে নিজের শর্ষে খেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ লাখ ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ছয় থেকে সাতজন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌবাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।’

উপজেলা কৃষি  অফিসার মোছা. শারমিন জাহান বলেন, মৌমাছি শর্ষের ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে। এতে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে শর্ষের ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। শর্ষের সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বিআরইউ