আমতলীতে বিকাশ ব্যবসায়ী হত্যা

তিন মাসেও আসামিদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
তিন মাসেও আসামিদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ

বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালীর ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী কাসেম (২২) হত্যা মামলার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও কোন কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

এ ঘটনায় স্বজনদের কান্না থামছে না এখনো। বিচার না পেলে আগামী ঈদের আগে মা রাহিমা বেগম ছেলের কবরের পাশে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। কাসেম কলাগাছিয়া গ্রামের নুর উদ্দিন মোল্লার ছোট ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৯টার সময় খুনের শিকার হন কাসেম। লাশ পরেছিল বাড়ির পাশের দোয়াচারা খালের পারের ধানক্ষেতে।

কাসেম বিকাশ ব্যবসার পাশাপাশি ছিল পটুয়াখালী সরকারি কলেজের বোটানির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

একই কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লিজা বেগম নামের এক মেয়ের সাথে ছিল তার বন্ধুত্ব। ঘটনার দিন রাতে কাসেম তার দোকান বন্ধ করে বান্ধবী লিজার সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ি রওয়ানা হন। এ সময় আকস্মিক রাত ৯টা থেকে সোয়া ৯টার সময় লিজার সাথে আকস্মিক কাসেমের ফোনালাপ বন্ধ হয়ে গেলে লিজার সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিক লিজা এ বিষয়টি কাসেমের মা রাহিমা বেগমকে জানায়। মা রিজিয়া বেগম বাড়ির অন্য লোকদের নিয়ে তখন খোঁজ করতে বাড়ির সামনে আসেন। এ সময় দোয়াচারা খালের ধানক্ষেতে সীমানার পাশে  মোবাইল ফোনের আলো জ্বলতে দেখে সেখানে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় কাসেমের নিথর দেহ পরে আছে।

স্বজন এবং এলাকাবাসী কাসেমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই রাতেই পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিাকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে ২৮ সেপ্টেম্বর কাসেমের লাশ দাফন করা করা হয় নিজ বাড়িতে।

কাসেম হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা নুর উদ্দিন মোল্লা অজ্ঞাত আসামি করে ২৮ সেপ্টেম্বর আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোন কিনারা করতে পারেনি। তবে ঘটনার পর সন্দেহ জনক রিজু ও কামাল নামে দুজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠালেও তাদের নিকট থেকে কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। আটক দু’জন চলতি মাসের ১৯ তারিখ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে।

কাসেম হত্যান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবিতে এলাকাবাসী সোচ্চার। গত ৩০ নভেম্বর শত শত এলাকাবাসী কলাগাছিয়া বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন থেকে তারা কাসেম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত খুনিদের কঠিন বিচার দাবি করেন।

কাসেমের সহপাঠী এবং বান্ধবী পটুয়াখালী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিজা বেগম বলেন, ঘটনার দিন রাত ৯টা থেকে সোয়া নয়টার মধ্যে কাসেমের সাথে আমার কথা চলছিল। আকস্মিক কথা বলা অবস্থায় কাসেমের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছু শব্দ পাই। সাথে সাথে আমি কাসেমের মাকে জানাই এবং কাসেমের খোঁজ নেওয়ার জন্য বলি। খুঁজতে গিয়ে তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানতে পাওে পরিবার। এঘটনায় আমি নির্বাক। কাসেম ছিল আমার একজন ভালো বন্ধু। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় নিহত কাসেমের  কোন শক্র ছিল না। টাকার জন্য খুন হতে পারে বলে ধারণা। এ বিষয়ে আমাদের পুলিশি তদন্ত অব্যাহত আছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর পরই এলাকা থেকে সাবেক ইউপি সদস্য পলাতক রয়েছে। সে আমাদেরও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।

নিহত কাসেমের মা রাহিমা বেগম বলেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, মোর পোলাডারে মাইরা খুনিরা ব্যামালা টাকা নিয়া গিয়েছে। পোলাডারে ক্যারা মারছে এখনো মোরা জানতে পারি নাই।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কাসেম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আশা করি আমরা দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত খুঁজে বের করতে পারবো।

ইএইচ