দিনাজপুরের কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিমের বিরুদ্ধে অর্থ জালিয়াতি, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ ও বই ক্রয়ে বড় দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই না, তার বিরুদ্ধে বিএড কোর্সের জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। লোকমান হাকিম এসব অভিযোগে ইতঃপূর্বে কারাভোগও করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম নিজেকে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষের এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষের শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোটার পক্ষে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুড়বৃত্তিমূলক পোস্ট করেন।
আওয়ামী সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকমান হাকিম ফ্যাসিবাদী সরকারের হুইপ ইকবালুর রহিমের খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
পরে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে ২০১৪ সালের ১২ মার্চ চূড়ান্ত বরখাস্ত হন। পরে প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে দিনাজপুর ইকবাল হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাতে বিদ্যালয়ের গাছ কাটার অভিযোগে বরখাস্ত হন। এছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়া ক্যাম্পাস খুলে জাল সনদ বিক্রি করার দায়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে যান। যা সে সময়ের জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
বিদ্যালয়ে যোগদানের পর ৫০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ আয়ের প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে সে নিজের বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন। অন্তহীন জালিয়াতির হোতা লোকমান হাকিম শিক্ষার্থীদের নিয়েও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের ২৭ জন শিক্ষার্থী নির্বাচনি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করায় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেনি। আবার সেন্ট ফিলিপস্ স্কুলের ফেল করা ১০ শিক্ষার্থীর নিকট ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণ করা হয়। লোকমান হাকিমের বিএড সনদটি জাল হওয়ায় দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার যাচাইয়ের জন্য নির্দেশনা দেন। পরে লোকমান হাকিমের টাকার খেলায় সেই অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।
লোকমান হাকিম প্রধান শিক্ষক হবার পর স্থানীয় যুবক মো. আসাদুজ্জামান নুরকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে তাকে সাড়ে ৬ বছর পারিশ্রমিক না দিয়ে অফিস সহকারী ও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ব্যবহার করেও শেষ পর্যন্ত নিয়োগের ব্যবস্থা করেননি। গ্রহণকৃত টাকাও ফেরত প্রদান না করে বরং অস্বীকার করেন।
একইভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য ওয়াজেদুল ইসলামের নিকট হতে ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ একটি মামলা হয়।
এ মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
তার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ হলো- তিনি ছাত্রীদের হিজাব পড়তে বাধা দেন। তার নামে ছাত্রীরা শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগও করে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এ ধরনের শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকাবাসী, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দ জোর দাবি জানায়।
এ ব্যাপারে কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই মিথ্যা ও বানোয়াট। দুর্নীতি আমি করিনি। আমি নিয়ম অনুযায়ীই আয়-ব্যয় করে এসেছি। মূলত একটি গোষ্ঠী আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছিল। কিন্তু আমি অস্বীকৃতি জানানোয় এমন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।
ইএইচ