কুমিল্লার বুড়িচংয়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও গাঁছিরা

গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও গাঁছিরা

খেজুর গাছের রস ও গুড় আমাদের সংস্কৃতির একটি  অংশ। শীতের সকালে খেজুরের রস, রসের পিঠা, গুড়-মুড়ি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য।

কুমিল্লার  বুড়িচং উপজেলায় গত কয়েক বছর আগেও শত শত খেজুর গাছ ছিল। ওইসব গাছ থেকে শীতকালে যত খেজুরের রস সংগ্রহ হতো তা দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে তৈরি হতো খেজুরের গুড়, যা এখন আর হচ্ছে না। ফলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে নকল গুড়ে। এখন এসব গুড়েই তৈরি হচ্ছে পিঠা- পুলিসহ অন্যান্য মিষ্টান্ন। গাছি সংকট, অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই  হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।
এসবের মধ্যেও দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রস সংগ্রহ করেন জলিল মিয়া। এলাকাবাসীর রসের পিপাসা মিটিয়ে চলেছেন তিনি। শুক্রবার সকালে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার মুন্সী বাজার (মাঝিগছার) পূর্ব এলাকায় গাছ থেকে রস সংগ্রহের  দৃশ্য দেখা যায়। 

জানা যায়, খেজুরের রস সংগ্রহ করেন জলিল মিয়া। তার বয়স এখন ৫৫ চলছে। এ মৌসুমে প্রতিবছর ৬০-৭০ হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি। শীতের শেষে আবার তালের রস সংগ্রহ করে বাড়তি উপার্জন করেন। রস সংগ্রহের কাজ করেই চলে তার সংসার।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ছত্রখিল, গোলাবাড়ী ,গোমতী এলাকাসহ বুড়িচং উপজেলার কয়েকটি এলাকার রাস্তায় ও অনেক বাড়িতেই কিছু খেজুরের গাছ রয়েছে। সারা বছর এসব গাছ অযন্ত-অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতের মৌসুমে এদের কদর বেড়ে যায়। গাছগুলোকে অবলম্বন করে জলিল মিয়ার মতো অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কারণ, মাঝিগাছা , মুন্সিবাজার, বাশমঙল, ফকির বাজার,ছিনাইয়া থেকে কম দামে রস কিনে বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়।

জলিল মিয়া জানান, এত বছর ধরে এলাকার খেজুর গাছগুলোতে হাঁড়ি বসিয়ে আসছি। খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি পাতলেও এখন ৩৫টি গাছের রস সংগ্রহ করেছি। মাসব্যাপী ঝোঁপঝাড় ভরা খেজুর গাছগুলোকে পরিষ্কার করে রস আহরণের জায়গা প্রস্তুত করতে হয়। প্রতিদিন বিকালে গাছগুলোতে রসের হাঁড়ি পাতি। কনকনে শীতে প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে ঘুম থেকে উঠে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করি।

এক স্থানীয় আলেম ও শিক্ষক মাও. মো. মিজানুর রহমান বলেন, খেজুরের রস হারিয়ে যাচ্ছে, গাছে তেমন দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, খেজুর গাছ আমাদের জীবন সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এখনো। তবে সে ঐতিহ্য এখন প্রত্যন্ত গ্রাম ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। এখানে আগে খাঁটি গুড় তৈরি হতো। যার কদর ছিল। আগের সেই খেজুর রসের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে, যা ফিরিয়ে আনা খুবই দরকার। 

আরএস