দেশের খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত উপজেলা, বৃহত্তর চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ায় আমন মৌসুমে ভালো উৎপাদন এবং ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে বিপুল উৎসাহে বোরো আবাদে বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পাশাপাশি অনেক কৃষক পুরোনো পদ্ধতিতে গরু দ্বারা চাষ করে জমি প্রস্তুত করছেন। এরই মধ্যে ৯০ ভাগ বীজতলা তৈরি হয়ে গেছে। দুয়েক সপ্তাহ পর ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হবে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় গেল আমন মৌসুমে ৭৭ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। আগে যেখানে বাজারে সাধারণত ২৫–২৬ টাকা কেজি দামে বিক্রি হতো, সেখানে এবার ধান কেজি প্রতি ৩৩–৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই ধানের ভালো দামে উৎসাহ বাড়ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমন মৌসুমে ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল।
তবে বোরো মৌসুমে ৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি জমিতে সবজি আবাদ এবং কিছু জমি সেচ সুবিধার অভাবে পতিত থেকে যায়। রোপণের জন্য ৪৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৬ হাজার ৪৭০ জন কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছিল।
চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে গিয়ে দেখা যায়, বোরো চারা রোপণের জন্য মাঠ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউবা বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই আবার বাজার থেকে চারা রোপণের জন্য শ্রমিক নিয়ে আসছেন।
গুমাইবিলে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমারের জানান, সেচ সুবিধা থাকায় এবং ধানের দাম পাওয়ায় গুমাইবিলে এবারো ৩৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হবে। এরই মধ্যে বিলের ১৫০ হেক্টর আমন বীজতলা করা হয়েছে। এবার আবাদকৃত বিলে উচ্চ ফলনশীল উফশী জাত ব্রি–ধান– ৬৭, ৭৪, ৮৮, ৮৯, ১০০ ও কাটারি এবং হাইব্রিড জাতের মধ্যে এসএলএইট এইট, হীরা–১ ও ২, ছক্কা, জনক রাজ, এপিআই–১, ২ আবাদ, ব্রীধান-৭৪, এসিআই-২, মাহিকো ১, হীরা ১ ও ২, কৃষিবিধ হাইব্রিড ধান ১ ও ২, চাষ হবে।
মরিয়ম নগর ইউনিয়নের কৃষক আবদুস সালাম জানান, চাষের উপযোগী করা হচ্ছে জমি। এবার ১ কানি জমিতে বোরো ধান চাষ করবো। কৃষি অফিসের পরামর্শে কুয়াশায় যাতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কাজ করছি। উন্নত জাতের বীজের আবাদ হওয়ায় এবার বোরোর ফলন হেক্টর প্রতি ৬-৭ টন হতে পারে। মূলত, যত আগে ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারব, তত আগে মাঠে চারা রোপণের সুযোগ হবে।
চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের গুমাই বিলের পাশে আদুপাড়া এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত মৌসুমে বন্যা, পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ১৫ কানি জমিতে আমন আবাদ করে গড়ে ১২ মেট্রিক টন করে ধান পেয়েছিলাম। এরমধ্যে মোটা ধান ৩৩০ টাকা এবং চিকন ধান ৩৫০ টাকা আড়ি (১০ কেজি) দামে বিক্রি হয়েছে। এবার বোরোতেও একই পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ করবো। এজন্য প্রয়োজনীয় বীজতলা তৈরি করার কাজ চলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষাবাদ ও ফলনও বেশি হবে সে হিসেবে কৃষকদের প্রণোদনা এবং সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বোরো চাষে কৃষকদের উৎসাহ জোগাতে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বীজতলা করার কাজও শেষ পর্যায়ে। উপজেলার কোথাও কোথাও রোপণ কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। তবে আগামী ২০ জানুয়ারির পর পুরোদমে রোপণ কার্যক্রম শুরু হবে। কৃষকদের সহায়তায় বীজতলা তৈরি থেকে চারা রোপণ কার্যক্রম তদারকি করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
বিআরইউ