মাদারীপুরে জনবসতি এলাকার প্রায় কিলোমিটার দূরত্বেই পাওয়া যায় মসজিদ। কোথাও এলাকার মুসল্লিরা মিলে মসজিদ তৈরি করে আবার কোথাও কোন বড় বাড়ির বাসিন্দারা মসজিদ তৈরি করে।
এছাড়া গ্রামের বিত্তশালী ব্যক্তিরা একাই তৈরি করেন মসজিদ। এ মসজিদগুলোতে ঐ এলাকার সাধারণ মানুষরাও নামাজ আদায় করেন। মসজিদ চাকচিক্য হলেও এই মসজিদের ইমামদের বেতন হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এই বেতনে বর্তমান বাজারে একজনের সারা মাস চলা সম্ভব নয়। সেখানে পরিবার নিয়ে কীভাবে একজন ইমাম মাস পার করবে সেই হিসাব করেন না মসজিদ কমিটি। অথচ এই ইমামদের ইমামতির পাশাপাশি করতে হয় অন্য কাজ।
ইমাম শব্দের অর্থ হচ্ছে নেতা। একজন ইমাম যেমন জামাতে নামাজের নেতৃত্ব দিবেন, তেমনি ঐ এলাকার আর্থ সামাজিক বিষয়েও নেতৃত্ব দিবেন একাই বলে ইসলাম।
কিন্তু বর্তমানে মসজিদ পরিষ্কার করা, আজান দেয়া আর নামাজ পড়ানোই মসজিদগুলোর ইমামদের কাজ। আর এজন্য তাদের পারিশ্রমিক ধরা হয় মাত্র ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে যা দিয়ে সংসার চালানো দূরের কথা একজন মানুষের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই সম্ভব নয়।
এমনই একজন ইমাম মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের আকন বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ এনামুল হক। পাঁচ সদস্যের সংসার তার। মসজিদ কমিটি তাকে প্রতি মাসে সম্মানী বাবদ তিন হাজার টাকা দেন। তাও ঠিকমতো প্রতি মাসে পান না তিনি। কোন মাসে দুই হাজার আর কোন মাসে আড়াই হাজার টাকা। তাই তিনি মসজিদের ইমামতির পাশাপাশি কৃষি কাজ করে কোনোমতে চলাল তার সংসার।
ইমাম হাফেজ এনামুল হক বলেন, আমি এই মসজিদে অনেকদিন থেকে ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এলাকাবাসী মিলে আমার বেতন নির্ধারণ করেছে ৩ হাজার টাকা। মাস শেষে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা ওঠে। তাদের (গ্রামবাসীর) এই টাকাটা দিতেও কষ্ট আবার আমারও চলতে কষ্ট হয়। দেখা যায় আমাকে চালতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। এই কয় টাকা বেতন নিয়ে আমার পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয়। আমি এই টাকা নিয়ে সংসার কীভাবে চালাব, বাজার কীভাবে করব, ছেলে সন্তান কীভাবে পড়াশুনা করাব। আমার বাড়ি এই এলাকায়। আমাকে ইমামতির পাশাপাশি কৃষি কাজ করতে হয়। আমার অনেক কষ্ট হয়ে যায়। এই গ্রামে আরও মসজিদ আছে। সেই মসজিদগুলোর ইমাম সাহেবদেরও একই অবস্থা। আমাদের আল্লাহই চালায়। অনেক লোক আছে চাকরি করে। তারা ৫০ হাজার ৬০ হাজার টাকা বেতন পায়। তাদের কীভাবে চলে আর আমাদের কীভাবে চলে। সরকার যদি আমাদের মতো ইমামদের কথা ভেবে সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করতো তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতাম।
আরও বেশ কয়েকজন ইমাম জানান, তাদের বেতন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। তাদের এই বেতনে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তারা মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। তার পাশাপাশি মসজিদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তাদেরই করতে হয়। তাই মসজিদের কাজ করে বাহিরে কাজ করার সময় কমই পান। তারপরও যেটুকু সময় পান অন্য কোন কাজ কর তাদের টাকা রোজগার করতে হয়। মসজিদের বেতন ও অন্য কাজ করে রোজগারের টাকায় খেয়ে না খেয়ে তারা বেঁচে আছেন। তারা স্বাভাবিকভাবে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারে এবং সন্তানদের লেখা পড়া করাতে পারে সেজন্য সরকার যদি তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তাহলে তাদের জন্য ভাল হতো।
মাদারীপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক রনি জানান, জেলায় ৭২১টি মসজিদে মক্তব (বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা) চালু আছে। এই মসজিদগুলোর ইমামদের সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভাতা দেয়া হয়। এছাড়া অন্য মসজিদগুলোর ইমামদের স্থানীয় বাসিন্দারা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দেয়। এভাবেই ইমামরা ইমামতি করছে। সরকার যেমন বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা দেয় সেইভাবে যদি ইমামদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করতো তাহলে ইমামরা বর্তমানের চেয়ে একটু হলেও ভালোভাবে বাঁচতে পারতো।
ইএইচ