মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লোকসানে ভোলাহাটের কৃষকেরা

ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম
মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লোকসানে ভোলাহাটের কৃষকেরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে লোকসানের মুখে পরেছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলনও ভালো হলেও কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন বিক্রি করা নিয়ে। তাদের উৎপাদিত কুমড়া কিনতে পাইকাররা আসছে না। জমিতেই পরিপক্ব মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে না পারাই বোরো আবাদে সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের। অথচ মিষ্টি কুমড়া চাষে উপজেলার কৃষকেরা কয়েক বছরে আর্থিকভাবে লাভবান  হয়েছিলেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬শ‍‍` হেক্টর জমিতে। গত বছর কৃষকেরা মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে লাভবান হওয়ায় ৭শ‍‍` হেক্টর জমি বেশি চাষ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, তালপল্লী থেকে ফলিমারি রাস্তার দুই পাশে মিষ্টিকুমড়ার স্তূপ করে রেখেছে কৃষকেরা। এর আগে জমি থেকে বিক্রি হয়ে গেলেও এখন আর বিক্রি হচ্ছে না। জমিতে বিক্রি না হওয়ার জন্য তুলে নিয়ে এসে রাস্তার পাশে অস্থায়ী বাজার করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্থানীয় বেপারীরা ক্রয় করে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করে থাকে। প্রথমে মিষ্টি কুমড়া ১২-১৪ শত টাকা মন করে বিক্রি করতে পারলেও এখন ৫শত করে বিক্রি করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

মিষ্টি কুমড়া চাষি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ২০ থেকে ২২ হাজার অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সময় মত বীজ না পাওয়ার কারণে চাষ আবাদ করতে দেরি হওয়ায় ফলন দেরিতে হয়েছে, সাথে সাথে শীতকালীন সবজি বাজারে আসার কারণে মিষ্টি কুমড়ার দাম কমে গেছে।’

কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমি ৪৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলাম। আগে জমিতে ১৪শত টাকা মন ছিল, এখন ৫শত টাকা মন করেও বিক্রি করতে পারি না।’ আরেক কৃষক মো. হুসেন আলী বলেন, ‘আমি ৫৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। জমিতেই পাইকারে আমাকে ১ হাজার টাকা মন করে বলেছিল। পরবর্তীতে ৭শত টাকা মন করে বলেছিল। জমিতে বোরো ধান চাষ করবো, জমি থেকে তুলে রাস্তায় নিয়ে এসেছি। বিক্রি করতে পারি না, এখানে ৪০০-৫০০ টাকা মন বলছে।’

কুমড়া পাইকার মো. মাসুদ বলেন, ‘আগে ছিল ১৫শত টাকা মন, এখন ৫০০ টাকা মন। বেচা কেনা হয় না, চাহিদা খুব কম। এলাকা থেকে কিনে ঢাকায় নিয়ে যায়। বিক্রি করতে পারি না।’ আরেক পাইকার বলেন, ‘অধিক পরিমাণ উৎপাদন ও এক সাথে জমি থেকে উত্তোলনের কারণে দাম কমে গেছে। আগে মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করেছি ১৪শত টাকার উপরে।  এক বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করতাম ৬০-৭০ হাজার টাকায়, সেটা এখন ২০-২৫ হাজার টাকা।’

ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সুলতান আলী বলেন, ‘বাজারে সবজির যোগান বেশি হওয়াতে স্বাভাবিক ভাবে সকল কৃষি পণ্যের দাম কমে গেছে। ভোলাহাটে মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন ভালো হওয়াতে তুলনামূলক দাম কমেছে। আগামী ছয় মাস পর্যন্ত পরিপক্ব মিষ্টি কুমড়া ভালো থাকবে। মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণ রেখে কয়েকমাস পরে বিক্রি করলে ভালো দাম পাবে।’

আরএস