ফরিদগঞ্জের ইসলামিক মিশন

জনবল সংকট-জরাজীর্ণতায় নিজেই অসুস্থ সেবাকেন্দ্র

শিমুল হাছান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
জনবল সংকট-জরাজীর্ণতায় নিজেই অসুস্থ সেবাকেন্দ্র

রাজনৈতিক আক্রোশের জেরে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ স্টাফ সংখ্যা ১৩ জনের স্থলে এসে দাড়িয়েছে ৩ জন।

হয়নি গত দেড় দশকে কোন সংস্কার কাজ। ফলে জরাজীর্ণতা আর জনবল সংকটের কারলে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে ১৯৮৮ সালে স্থাপিত ইসলামিক মিশন নামক সেবাকেন্দ্রের।

অথচ প্রান্তিক পর্যায়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, রোগ নির্ণয় ও ওষুধ প্রদান, দুস্থ মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদান, মসজিদভিত্তিক মক্তবে শিক্ষা প্রদান, দুঃস্থ দারিদ্র দূরীকরণ ও আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণদান, নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তৎকালীন ধর্ম, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নানের উদ্যোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ফরিদগঞ্জের ইসলামপুর গ্রামে এ কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে গ্রাম পর্যায়ে এ সেবা কেন্দ্রটি সেই সময়ে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে জনবল সংকট ও ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ হয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ইসলামপুরসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল ইসলামিক মিশন। তৎকালীন সময়ে উন্নত ভবন ও পর্যাপ্ত জনবল থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী এ সেবাকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতো। বর্তমানে ইসলামিক মিশন নামক এ প্রতিষ্ঠানটির ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। তারই সাথে যুক্ত হয়েছে জনবল সংকটের মতো সমস্যা।

বিভিন্ন পদে ১৩ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এই তিন জনের প্রচেষ্টায় বর্তমানে এ সেবা কেন্দ্রটিতে শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে।

কৃঞ্চপুর থেকে এমবিবিএস ডাক্তার দেখাতে আসা খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূর, তাই এখানে বড় ডাক্তার দেখাতে আসি। কিন্তু প্রতিদিন ডাক্তার না থাকায় আমাদের অনেক হয়রানি হতে হয়। টাকার অভাবে প্রাইভেটে ডাক্তার দেখাতে পারি না। আগে এখানে অনেক ডাক্তার ছিল, এখন যদি আগের মতো ডাক্তার আসে তাহলে আমরা গরীব মানুষরা চিকিৎসা করাতে পারবো।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল খায়ের, নেছার আহমেদ, ইব্রাহীম মিয়া, আব্দুল কাদিরসহ আরও অনেকেই বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছরে এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার জন্য ভরসাস্থল ইসলামিক মিশন। কিন্তু পতিত সরকারের কালো থাবায় এখান থেকে চিকিৎসক ও জনবল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। সরকার দ্রুত জনবল নিয়োগ ও ভবন সংস্কার করে দিলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর হবে।

মিশনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা. মো. কামাল হোসেন সপ্তাহে দু’দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) রোগী দেখেন।

তিনি জানান, আমার মূল দায়িত্ব নোয়াখালীর একটি ইসলামিক মিশনে। এখানে চিকিৎসক না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় আমাকে। এই সেবা কেন্দ্রটিতে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও ভবনটি সংস্কার না করা হলে এই অঞ্চলের বহু মানুষকে চিকিৎসা বঞ্চিত হতে হবে। তাই অতিদ্রুত এ সেবা কেন্দ্রটিতে জনবল নিয়োগ ও ভবন সংস্কার করে চিকিৎসা বঞ্চিত প্রান্তিক জোনগোষ্টিকে চিকিৎসা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

ইএইচ