চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল একক আধিপত্য বিস্তার করে অনিয়ম দুর্নীতি করে টাকার কুমির বনেছিলেন।দেশের একমাত্র প্রধান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিলেন।প্রত্যেক স্থরে তার ছিল নিজস্ব বাহিনী। তার ক্ষমতার দাপটে কেউ টু শব্দ করতে পারতোনা।যেন মামার বাড়ির আবদার। যখন যা ইচ্ছে, তা করে যেতেন। অবশেষে শেষ রক্ষা হলো না। যেতে কারাগারে।
তাঁর স্থলে চট্টগ্রাম বন্দর নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামান। এক ভূতূড়ে পরিবেশ ও অনিয়ম দুর্নীতির মহাযজ্ঞের বিপরীতে দায়িত্ব নেন নতুন চেয়ারম্যান এস এম মুনিরুজ্জামান।তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বীর দর্পে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।বন্দরের সকলের মুখে মুখে তিনি যেন এক ম্যাজিশিয়ান। সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েলে যে সিন্ডিকেট ছিলো তা ভেঙ্গে চুরমার করে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে বেড়েছে আমদানি রপ্তানি।আ.লীগ সরকারের আমলে ছিলোনা কোন জবাব দিহি বন্দরে।কারণ একছত্র ক্ষমতার দাপটে যা ইচ্ছে তা করতেন সাবেক চেয়ারম্যান।নতুন চেয়ারম্যান এস এম মুনিরুজ্জামান দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। তবে নিজের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলে সকল বাধা অতিক্রম করে সফলতায় ভরপুর এনে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান।
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান এস এম মুনিরুজ্জামান বন্দরের সকল চেয়ারম্যানের ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। তার অল্প সময়ে ব্যবসার পরিবেশসহ অর্থনীতৈক প্রবৃদ্ধি দ্রুত এগিয়ে নিয়েছেন।আ.লীগ সরকারের চেয়ে আমদানিতে অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে ভোগ্য পণ্য,এলপি গ্যাস, নির্মাণ উপকরণ পাথর কয়লা ইত্যাদি। গতবছরের তুলানায় পণ্য আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। চাল আমদানিতে ৭৩ শতাংশ, তেলে ৫৫ শতাংশ, চিনি ২ শতাংশ, পেঁয়াজ ২১৩ শতাংশ, ডাল১৬৭ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামাল ৬ শতাংশ,সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামালে ৫৫ শতাংশ, সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানি ১৯ শতাংশ,এলপি গ্যাসের আমদানি ৫৪ শতাংশ, নির্মাণ উপকরণ পাথর আমদানি ২১ শতাংশ,কয়লা ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে।
পুরোনো জাহাজ আমদানিতে ২৫৮ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে।আরো বেড়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পের বন্ডে।এছাড়া
বচট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগে এরই মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে কয়েকটি কনটেইনার টার্মিনাল। সামনে আরও বেশ কিছু নতুন টার্মিনাল নির্মাণ হবে। তবে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা দেশি নাকি বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে হবে, তা জানতে সাধারণ মানুষের আগ্রহ লক্ষ করা গেছে।
বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন,বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করছি চট্টগ্রাম বন্দরের একটি পরিবর্তন আনার জন্য। যে কমিটমেন্টে নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। তা পালন করতে বদ্ধপরিকর। দেশের একমাত্র প্রধান অর্থনীতির চাবি চট্টগ্রাম বন্দর অনিয়ম দুর্নীতি মুক্ত করে দেশী বিদেশি ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করে দেশের আর্থিকখাত মজুত করতে পারলে আসবে আমার সফলতা।তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।তিনি যুক্ত করেন,
কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত পাঁচ মাসে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায়, নৌপরিবহন উপদেষ্টার নেতৃত্বে এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের সমুদ্রপথে বহির্বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। চট্টগ্রাম বন্দরকে জবাবদিহি, কল্যাণমূলক এবং অধিকতর ব্যবহারবান্ধব করার লক্ষ্যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি অংশীদারত্বের বিষয়টি দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআইকে সম্পৃক্ত করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টার্মিনাল অপারেটর এপিএমের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, বে-টার্মিনাল এলাকায় বন্দরের নিজস্ব জমিতে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং আগামী জানুয়ারিতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জিসিবি এলাকায় নবনির্মিত কেমিক্যাল শেডের কার্যক্রম চালুর কাজ চলছে। গত দুই মাসে প্রায় ২ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কর্ণফুলী নেভিগেশনাল চ্যানেলে যথাযথ নাব্য বজায় রাখতে চ্যানেলের বিভিন্ন অংশে ও জেটির সম্মুখভাগে সংরক্ষণ ড্রেজিং কাজ শেষ হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘লালদিয়ার বিষয়ে নিয়োজিত ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশা করা যায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হবে। বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও কার্যক্রম চলছে। এনসিটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেশনাল টার্মিনাল হওয়ায় এটি পরিচালনায় আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে চট্টগ্রামের নৌপথে পণ্য পরিবহন খাতে বড় পরিসরে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বন্দর পরিচালনাকারী দুই কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড ও এপি মোলার-মেয়ার্স্ক। তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে নতুন বন্দর নির্মাণে সহায়তা করে বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম এবং এ পি মোলার-মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মোলার উগলা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই তারা ওই আগ্রহ দেখান বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের সিইও বলেন, তারা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট কমাতে এবং নির্গমন কমিয়ে বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চায়। নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এবং দূষণ কমাতে সহায়ক হতে পারে। ডিপি ওয়ার্ল্ড যেখানে বিনিয়োগ করেছে, সেখানেই উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। ২০২২ সালে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তখনকার সরকার তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ডিজিটাল অনলাইন কাস্টমস পদ্ধতি চালুরও আগ্রহ দেখিয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ড, যা দুর্নীতি কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম বলেন, তারা বাংলাদেশের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলোতেও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। প্রধান উপদেষ্টা তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়তে এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে আরও বন্দর নির্মাণ করতে চায়। আমাদের এটি করতেই হবে কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে জড়িত। আমরা এটিকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়াতে চায়, কারণ বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এ বন্দর উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের জন্য একটি আঞ্চলিক রপ্তানি হাব হতে পারে। আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে, কারণ সময় যথেষ্ট মূল্যবান।’
বন্দর পরিচালনায় আসছে নতুন যন্ত্রপাতি: কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য বৃদ্ধি প্রকল্পে গত তিন মাসে ১ দশমিক ৩৭ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং শেষ হয়েছে।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন,
তবে এটি পুরোপুরি শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। অন্যদিকে, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহে বন্দরে পৌঁছেছে ২০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি মোবাইল ক্রেন। এলসি খোলা হয়েছে দুটি হেভি ট্রাক্টর ও দুটি লো বেড ট্রেইলারের। প্রক্রিয়াধীন আছে একটি ম্যাটেরিয়াল এবং মাল্টি হ্যান্ডলারের। বন্দর এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করতে কেনা হবে দুটি আধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ।
সব সেক্টরকে ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকীকরণে উদ্যোগ: আধুনিক পোর্ট ইকোসিস্টেম, পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেমের প্রবর্তন, ডিজিটালাইজেশন এবং আধুনিকীকরণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দরের সরকারি নথিপত্র আদান-প্রদান করা হতো অ্যানালগ সিস্টেমে। তবে এখন ৮০ শতাংশ কাজ ডি-নথি পদ্ধতিতে করা হবে। সিপিএ অটোমেশন প্রজেক্টের আওতায় ট্রেনিং অটোমেশন সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে চালু হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগের সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করার কাজ চলছে। অ্যাসাইকুডা, টিওএস এবং বায়োমেট্রিক ডেটা সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয়ের কাজও প্রক্রিয়াধীন।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের ফিক্সড অ্যাসেটস ভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পেনশনভোগীদের পেনশন নথিগুলো ডিজিটাল আর্কাইভ করে সংরক্ষণ করা সংক্রান্ত কাজও শুরু হয়েছে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি ক্রয় কার্যক্রম করার জন্য এ-সংক্রান্ত সব কাজ ই-জিপিতে করা হবে। দরপত্র প্রক্রিয়া যাতে অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক এবং বৈষম্যহীন নিশ্চিত করা হচ্ছে। টার্মিনাল অপারেটর এবং বার্থ অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে পিপিএ ২০০৬, পিপিআর ২০০৮ এবং প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ অনুসরণে ওটিএম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
আরএস