সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে উচ্চতর তদন্তের দাবি আজহারির

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে উচ্চতর তদন্তের দাবি আজহারির

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিনা অপরাধে জেলে বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. মিজানুর রহমান আজহারি।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের পঞ্চম দিনে প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. আজহারি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর স্মৃতি বিজড়িত এই ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে সব আছে কিন্তু আমাদের কলিজার টুকরাটা আমাদের মাঝে নাই। সব আজকে আছে তবুও কি যেন নাই। প্রতি ১০০ বছরে আল্লাহ তায়ালা সমাজ সংস্কারের জন্য একজন মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) পাঠান। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন তেমন একজন মুজাদ্দিদ।

সাঈদীর মৃত্যু পরিকল্পিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা আজও জানি না, আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু কি স্বাভাবিক হয়েছে না কি পরিকল্পিত মেডিকেল কিলিং ছিল। এটা যে পরিকল্পিত মেডিকেল কিলিং ছিল এটা ধারণা করার পেছনে অনেক কারণ আছে। তিনি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার ছিলেন। এজন্য এটা মেডিকেল কিলিং হতে পারে এ ধারণা আমরা করতেই পারি।

ড. মিজানুর রহমান আজহারি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শিরক-বিদআতের আস্তানা তছনছ করে দিয়েছিলেন। আজীবন ইসলামকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব কেঁদেছে।

আজহারি আরও বলেন, আমাদের জন্মের পর থেকে এমন চমৎকার সময় আর পাইনি। এটাই আসল সময়, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই, উচ্চতর তদন্ত কমিটি করে আল্লামার মৃত্যু কি  হত্যাকাণ্ড ছিল, না কি স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল। এই রিপোর্ট গণমানুষের কাছে জানাতে হবে।

তিনি বলেন, যেখানে আল্লামা সাঈদীকে কবরস্থ করার কথা ছিল সেখানেও কবর দিতে দেওয়া হয়নি। আল্লামা সাঈদীর জন্য পুরো পৃথিবী কেঁদেছে। কাবার গিলাফ ধরে ধরে মানুষ কেঁদেছে। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মৃত্যু কি আর হতে পারে।
আজহারি বলেন, আল্লাহ কোরআনে তিনটি আদেশ ও তিনটি কাজকে নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হল ন্যায় বিচার করা, একে অপরকে সম্মান করা ও নিকট আত্মীয়দের দান করা। আর নিষেধ করা হয়েছে অশ্লীলতায় না জড়ানো, ইচ্ছাকৃত মন্দ বা অসৎ কাজে না জড়ানো ও সীমালঙ্ঘন না করা। এ আদেশ-নিষেধ মেনে সমাজকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা কোরআনে আত্মীয়দের সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর ফজিলতের কথা উল্লেখ করেছেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করা ও সম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের পারিবারিক জীবনের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্বের মূল উপাদান। ইসলামে আত্মীয়তার বন্ধনকে মহান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যা পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে।

তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দান বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা সাঈদীর স্মৃতিবিজড়িত ময়দান। আমরা কোরআনের ছায়াতলে এক ও অভিন্ন। যেকোনোভাবে আমাদের এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।’

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। এ দেশে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশে যদি সুখ, শান্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই।

ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহেরের সভাপতিত্বে মাহফিলে বক্তব্য রাখেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাওলানা শামীম সাঈদী, মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বিআইএ জামে মসজিদের খতিব সাফওয়ান বিন হারুন আজহারি, অলি খাঁ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ প্রমুখ।

আল্লামা সাঈদীর ছেলে মাওলানা শামীম সাঈদী বলেন, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ১৩ বছর জেলে জালেম শাসকেরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি। কোরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আল্লামা সাঈদী দেশের আনাচেকানাচে দাওয়াত দিয়ে গিয়েছেন। কোরআনের রাজ কায়েম করতে যদি আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়, আমরা সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব।

মাহফিলে আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন, মাওলানা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবিরী আল মাদানী।

বিআরইউ