রাঙ্গুনিয়ায় শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনেও দিশেহারা কৃষক

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
রাঙ্গুনিয়ায় শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনেও দিশেহারা কৃষক

পাহাড় ও কর্ণফুলী নদীবেষ্টিত সবুজ প্রকৃতি পটভূমি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, এই উপজেলায় প্রতিবছরের ন্যায় শীতকালীন সবজি আবাদ করেছে কৃষকরা। তবে এবার শিম, আলু, ফুলকপি, মুলা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, মরিচসহ সব ধরনের শাক-সবজির বাম্পার ফলনেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের কপালে। সবচেয়ে দাম কমেছে ফুলকপি ও মুলার। ফুলকপি ও মুলা বিক্রি না হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদিত ফসলের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন খরচ জুটছে না বলে জানান উপজেলার কৃষকরা। ফলে উৎপাদনের মূলধন হারিয়ে কৃষকের মুখে এখন হতাশার ছাপ।

গেল বছর আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় কৃষকরা ধান চাষ ছেড়ে আলু চাষে মনোযোগী হয়ে, এ বছর কৃষকরা আলু চাষ বেশি করেছে। অনেকে অন্যান্য অধিক লাভের সবজি চাষ ছেড়ে এ চাষে তাদের সবটুকু বিনিয়োগ করেন। মাসখানেক আগেও আলুর দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ১০০ টাকা। এখন বাজারে ২০-৩০ টাকায় আলু, ৪০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ৭০ টাকা কেজি দরের শিম বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকায়, পটল ৫০ থেকে ১৫ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা থেকে ২০ টাকায়, টমেটো ৫০ থেকে ১০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ১৫ টাকায়, লাউ ৫০ টাকা থেকে ১০ টাকায় আর মুলা ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫-৮ দরে। এ পরিস্থিতিতে সবজি চাষিরা দুশ্চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে উপজেলার প্রায় সব কয়টি ইউনিয়নের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবজি চাষ করে আগে কিছু বিক্রি হয়েছে। এখন জমি থেকে বাজারে নিয়ে গেলে বিক্রি হয় না। একই ভাবে শিম, আলু, ফুলকপি, মুলা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, মরিচসহ সব ধরনের শাক-সবজির চাষিরা চাষকৃত ফসলের কি অবস্থা হবে এ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। মূলত কৃষি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম মিলছে না। এমতাবস্থায় এলাকার কৃষকদের সরকারের কাছে দাবি কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস করে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে কৃষকদের দুর্ভোগ কমাতে হবে।

উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম জানান, অনেক দিন ধরেই কৃষি কাজ করছি। কিন্তু বাজার ব্যবস্থার কারণে সময়-অসময়ে দাম উঠা নামা করছে। বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি একর জমিতে আলু চাষ করতে ৬০০-৭০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়। এক একর জমিতে আলু আবাদ করতে ১২০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ৪০ কেজি জিপসাম এবং ৫-৬ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। চলমান পরিস্থিতিতে যে টাকা ইনভেস্ট করে চাষ করেছি সে তুলনায় উৎপাদনের সময় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত সবজি।

উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের কৃষক আবদুল হামিদ বলেন, সবজির একেবারেই দাম কম। অন্যদিকে বাড়ছে সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম। ১ কানি জমিতে শিমচাষ করেছি। প্রথম অবস্থায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কেজি বিক্রি হয়েছে। যখন ক্ষেতে বেশি পরিমাণ শিম উঠতে শুরু করেছে, তখন দাম পড়ে ১০ টাকা হয়েছে। খরচের টাকা আর জমিতে সার ও কীটনাশক খরচে লাভতো দূরের কথা এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে। 

তিনি আরো জানান, এছাড়াও আমি ফুলকপি ও মুলা চাষ করেছি। উৎপাদিত ফুলকপি ও মুলা প্রতি কেজির পেছনে খরচ পড়েছে ১৫ টাকা করে। কিন্তু পাইকারিভাবে কেজি ৫ টাকার বেশি কেউ নিচ্ছে না। ভালো লাভের আশায় ফুলকপি ও মুলা আবাদ করে উলটো বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।

উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের কৃষক খালেক জানান, লাভের আশায় পেঁয়াজ চাষ করে অনেক লোকসান গুণতে হচ্ছে। পেঁয়াজের বীজ, পাওয়ারটিলারের, ডিজেল এবং শ্রমিকের খরচ দিয়ে প্রায় ১ একর জমিতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। পেঁয়াজ ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লাভ না হয়ে লোকসানে মূলধন হারাতে বসেছি।

উপজেলার শান্তিরহাট বাজারের বেপারি দেলোয়ার হোসেন জানান, বাজারে প্রচুর শিম, আলু, ফুলকপি, মুলা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, মরিচসহ সব শাক-সবজি বিক্রির জন্য আসলেও ঠিকমতো বিক্রি হয় না। বাজারের নির্ধারিত দিনে আমাদের পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কৃষকরাও সরাসরি হাটে এসব সবজি বিক্রি করেন। তাই কৃষকদের থেকে যা আনি বিশেষ করে ফুলকপি, মুলা তার অর্ধেক নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, কৃষক পর্যায়ে দাম একটু কম পেলেও গ্রাহক পর্যায়ে সবজির দাম বেশ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে, এবার রাঙ্গুনিয়ায় সব ধরনের সবজি বেশ ভালোই আবাদ হয়েছে। এরই মাঝে আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় আগাম ধান কর্তনের পর কৃষকরা আলু চাষ আবাদ শুরু করেছিল। চলতি বছর উপজেলায় ৩ শ ২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮.৫ থেকে ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ। আমরা মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের সবজি চাষে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা পরামর্শ দিয়ে আসছি।

বিআরইউ