কুষ্টিয়ায় থানা বাস্তবায়নের দাবিতে অবরোধ, চার ঘণ্টা পর আশ্বাসে স্বাভাবিক যান চলাচল

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম
কুষ্টিয়ায় থানা বাস্তবায়নের দাবিতে অবরোধ, চার ঘণ্টা পর আশ্বাসে স্বাভাবিক যান চলাচল

ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়নের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন সাতটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি ) সকাল ৯ টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া বাজারে থানা বাস্তবায়নের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় বিক্ষোভকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে উভয় প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়কের বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভের পর পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ সাময়িক স্থগিত করা হয়।
আন্দোলনকারীরা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঝাউদিয়া থানার অনুমোদন দিয়েছে। তারপরও একটি মহলের গড়িমসির কারণে এ থানা উদ্বোধন করা হচ্ছে না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত হয়ে থানা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। অন্যথায় তাঁরা সড়ক থেকে সরে যাবেন না।

আন্দোলনকারী আরও জানান, সন্ত্রাসকবলিত ঝাউদিয়া এলাকায় থানা বাস্তবায়নের জন্য ১৯৯৮ সাল থেকে চলে আসা আন্দোলনের ফসল ঝাউদিয়া থানা। ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাকে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে ‘ঝাউদিয়া থানা’ এবং ‘ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্প’কে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প’ হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব উঠলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে কুষ্টিয়া জেলার ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা’কে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে ‘ঝাউদিয়া থানা’ নামকরণ এবং ‘ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্প’কে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প’ হিসেবে নামকরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।

এর প্রতিবাদে এবং দ্রুততম সময়ে থানার কার্যক্রম শুরু করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ঝাউদিয়া, পাটিকাবাড়ি, গোস্বামী দুর্গাপুর, উজানগ্রাম, মনোহরদিয়া, পশ্চিম আবদালপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দা। তাঁরা আজ সকালে মিছিল নিয়ে বিত্তিপাড়া বাজারে জড়ো হন।

ঝাউদিয়া বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, সাতটি ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র ঝাউদিয়া। এখানে দীর্ঘদিন ধরে থানা না থাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই, এমনকি হত্যার ঘটনা ঘটছে।
থানা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হায়াত আলী বিশ্বাস বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে ঝাউদিয়া থানা উদ্বোধন করে কার্যক্রম শুরু না করলে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে।

মনোহরদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. হায়াত আলী বলেন, ‍‍`ইবি থানার ওসি ইতিমধ্যে আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমরা তাকে বলেছি কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে এখানে আসতে হবে। উনি কবে থানা উদ্বোধন করবেন, সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত করব।‍‍`

ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল বলেন, ঝাউদিয়া থানা স্থাপনের সব বিষয় নির্ধারণ হওয়ার পরও পুলিশ সুপার দিনের পর দিন বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখছেন। আজকের আন্দোলনে দায় তাদেরই নিতে হবে।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন, অপরাধ ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, সাড়ে বারটার পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি থানা বাস্তবায়ন কমিটির সাত সদস্যের সঙ্গে পুলিশ সুপার বৈঠক করবেন। এরপর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঝাউদিয়ায় থানা স্থানান্তরের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি হয়েছে। সেটা করতে একটা প্রক্রিয়া আছে। তবে একই সময়ে আরেকটা চিঠি এসেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থানা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। সব বিষয় আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরএস