রূপসা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
রূপসা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ও মাঝি-মাল্লার গানের তালে তালে খুলনার রূপসা নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌকা বাইচ দেখতে নদের দুই পাড়ে লাখো মানুষের ঢল নামে।

বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা রূপসা নদীর ১নং কাস্টমস ঘাট থেকে শুরু হয়ে খান জাহান আলী সেতুতে (রূপসা সেতু) শেষ হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নৌকা বাইচের দশটি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

খুলনা শহর ছাড়াও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ এ নৌকা বাইচ উপভোগ করতে ছুটে আসেন। কেউ বসে ছিলেন নদীর পাড়ে, কেউ আশপাশের বাড়ির ছাদে। অনেকে উঠে পড়েন গাছের ডালে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রলার ভাড়া করে অনেকেই বাইচ উপভোগ করেন। রূপসার দুই পাড়ের মানুষ বাঙালির প্রাণের এ উৎসবে মেতে ওঠেন।

প্রতিযোগিতা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে কয়রার সুন্দরবন টাইগার্স নামক নৌকা বাইচ দল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয় জয় মা কালী ও মোবাইল নামের নৌকা বাইচের দল। প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ৭৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। এর আগে নৌকা বাইচ উপলক্ষ্যে সকাল ১১ টায় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক থেকে শুরু হয়ে এক নম্বর কাস্টমস ঘাটে গিয়ে এসে শেষ হয়।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিযোগিতার সময় ডুবুরি দল ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রস্তুত ছিল। এছাড়া নৌ-দূর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে।

খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামছুল আলম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে নৌকাবাইচ আমার খুবই প্রিয়। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে এসেছি আনন্দ করার জন্য। নৌকা বাইচ দেখতে এসে আমরা সবাই খুশি।’

দিঘলিয়া উপজেলা থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা কলেজছাত্রী সাদিয়া খাতুন বলেন, ‘নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

ফরিদপুর বোয়ালমারী থেকে আসা তুফান নামের নৌকা বাইচের প্রতিযোগী বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘রূপসা নদীতে অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচে অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আগামীতে এই নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হলে আমরা আবারো অংশগ্রহণ করবো।’

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার বলেন, ‘নৌকা বাইচ আবহমান বাংলার একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রেখে উৎপাদনশীল কাজের সাথে যুক্ত রাখতে এবং খুলনাবাসীকে নির্মল বিনোদন উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। তিনি বলেন, নৌকা বাইচ গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্য। এরই ধারাবাহিকতায় উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনাবাসীকে নির্মল বিনোদন উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এটি হচ্ছে তারুণ্যের উৎসবের অংশ। নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে আমরা তারুণ্যের উৎসব উদযাপন করছি। আমরা চাচ্ছি তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে বাংলাদেশটাকে সাজাতে, যেখানে সহযোগিতার নীতি প্রচার করা হবে। একে অপরের কাজে আমরা সহযোগিতা করবো এবং তারুণ্যের শক্তিকে প্রকাশ ঘটিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

এ সময় নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথি বলেন, আপনারা যারা নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করবেন, আপনাদের সুশৃঙ্খল অংশগ্রহণের মাধ্যমে আজকের এই উৎসবটি আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকারের সভাপতিত্বে নৌকা বাইচ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সুরাইয়া আক্তার জাহান, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার ও খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

আরএস