দুর্নীতির ভাগাড় সিডিএ

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
দুর্নীতির ভাগাড় সিডিএ
  • ১৩ প্রকল্পের ২০ হাজার কোটি টাকা অনিয়মের তদন্ত চলছে 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অনিয়ম দুর্নীতি দিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট শুরু না করলে দিন মন মেজাজ ভালো যেতো না। টাকার গন্ধে ঘুমাতো হতো তাদের।

এতো এতো অনিয়ম দুর্নীতির পরও গত সরকার রহস্যজনক কোন ব্যবস্থা নিতেন না। যেন প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম দুর্নীতি করার জন্য করা হয়েছে।

অনিয়ম দুর্নীতি হওয়ার আসল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চেয়ারম্যান পদটি রাজনৈতিক হওয়া। এতে দলকে সুবিধা দিতে চেয়ারম্যান অনিয়ম দুর্নীতি করার ফলে সিডিএ বাকী কর্মকর্তারা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তেন বলে অভিযোগ।

সিডিএ চেয়ারম্যান পদে গত সরকারের সময়ে নগর আ.লীগ নেতা নেতা আবদুচ ছালাম, জহিরুল আলম দোভাষ এবং সবশেষ মোহাম্মদ ইউনুসকে নিয়োগ দিয়েছিল।

সালামের সময়ে প্রকল্প নেওয়া লুটপাট সবচেয়ে বেশি হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরের দুই চেয়ারম্যানের মেয়াদে নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ না হলেও বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়।

সম্প্রতি গত সরকারের সময়ে ১৩ প্রকল্পের ২০ হাজার কোটি টাকা ‘অনিয়মের’ তদন্ত বর্তমান চলমান।

প্রকল্পগুলো হল– নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, মুরাদপুর ফ্লাইওভার, কদমতলী ফ্লাইওভার, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, কালুরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, বাকলিয়া সংযোগ সড়ক, সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প, সিডিএ স্কয়ার প্রকল্প, কল্পতরু প্রকল্প, সল্টগোলা ডরমিটরি প্রকল্প, বায়েজিদ লিংক রোড ও চট্টগ্রাম মহানগরীর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন প্রকল্প।

এর মধ্যে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির অনিয়ম তদন্তে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একটি উপকমিটি গঠন করেছিল এবং প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে এতে কিছু ‘অসঙ্গতি’ ছিল।

নগরবাসীর কাছে এই সেবা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত লাভ করছে।

পদোন্নতি ও এখতিয়ার বহির্ভূত প্রকল্পে কোন জবাবদিহিতা ছিল না। গত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কোন জবাবদিহিতা না থাকায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলছেন, আগে অফিসের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে অতীতের দুর্নীতির অনুসন্ধানে মনোযোগী হচ্ছেন তিনি। লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার লম্বা এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও অনেক অংশে নির্মাণকাজ এখনো চলছে। তিনবার ডিজাইনে পরিবর্তন এনে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।

কাট্টলী থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড নামের সোজা একটি সড়ক তৈরিতে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়াতে ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে চারবার। এভাবেই অন্তত ২৫টি প্রকল্পে মাঝপথে ডিজাইন পরিবর্তন করে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। নির্বিঘ্নে এসব হরিলুটের আয়োজন সম্পন্ন করতে ভেঙ্গেছেন প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা। নিয়ম ভেঙে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দেয়া হয়েছে পদোন্নতি। এসব অপকর্ম নির্বিঘ্ন করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়েই তৈরি করা হয়েছিল বোর্ড। তাই এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি বিশ্লেষকদের।

পতিত স্বৈরচারী সরকার আমলে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়া সিডিএকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি নগরবাসী।

ইএইচ