কুষ্টিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে ৮ ভাতাভোগী আনসার সদস্য বহিষ্কার

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম
কুষ্টিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে ৮ ভাতাভোগী আনসার সদস্য বহিষ্কার

সামাজিক উন্নয়ন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগী হিসেবে আনসার ও ভিডিপির বিরুদ্ধে উঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে এই বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলার বিচ্যুতিসহ পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সৃষ্টির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ৮জন ভাতাভোগী আনসার সদস্যকে বাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃত ভাতাভোগী আনসার সদস্যরা হলেন যথাক্রমে- ০৫নং পৌর ওয়ার্ড পেয়ারাতলার দলনেতা মোছা: নাসিমা খাতুন, ১৫নং পৌর ওয়ার্ড যুগিয়ার দলনেতা ঈশিতা খাতুন, সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়ন দলনেতা মোছা: জেসমিন খাতুন, উজানগ্রাম ইউনিয়ন দলনেতা মাসুম বিল্লাহ এবং আনসার প্লাটুন কমান্ডার মাজেদুর রহমান, আইলচারা ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার আশিক আলী, জিয়ারখি ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার সাইদুর রহমান এবং হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন দলনেত্রী মোছা: সেলিনা আক্তার বানু।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জেলা কমান্ড্যান্টা কুষ্টিয়ার এক দাপ্তরিক আদেশ সূত্রে জানা যায় যে, ‘ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সদর দপ্তর খিলগাঁও ঢাকার স্মারক নং ৪৪.০৩.০০০০.০৪১.১৯.০১০.২২ (খন্ড-৪).৪৬, তাং ১৩/০১/২০২৫ খ্রি: এবং ইউনিয়ন/ওয়ার্ড (পৌর) দলনেতা/দলনেত্রী (স্বেচ্ছাসেবী) নিয়োগ ও অব্যাহতি নীতিমালা- ২০২৪ ও আনসার কোম্পানী/ প্লাটুন কমান্ডারদের নীতিমালা পরিশিষ্ট গ’এর ক্রমিক নং ১০এ উল্লেখিত দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশনা থাকায় সংযুক্ত ছকে বর্ণিত ৮জন ভাতাভোগী সদস্য/সদস্যকে বহিষ্কার করা হলো’।

আনসার সূত্রে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণ বিহীনদের জাল সনদ দিয়ে সদস্যভুক্ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিউটি দিয়ে তাদের ভাতা/বেতনের টাকায় ভাগ বসানো, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, কেনাকাটা, রেশনিংএ অনিয়ম, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আত্মসাৎসহ নানা খাত হতে এসব আনসার সদস্যরা অবৈধ প্রক্রিয়ার অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের ওপেন সিক্রেট।যদিও এসব অভিযোগকারীরা নিরাপত্তার স্বার্থে  নিজেদের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। সম্প্রতি এসব বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ায় সদর দপ্তরের উদ্যোগে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।

তবে এমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে আরও কয়েকজন আনসার সদস্য এখনও বহাল তবিয়তে অফিস করছেন বলে দণ্ডপ্রাপ্তদের কয়েকজনের অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বহিষ্কৃত এক সদস্য দবি করেন, সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট কাশেম আলী’র যোগসাজশে এযাত্রায় তারা রক্ষা পেয়েছে। এক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এই আনসার কর্মকর্তা তাদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সরকারী অফিসগুলির যে কোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেলে সব সময়ই ‘পানি নীচের দিকে গড়াই’ এর মতো সকল শাস্তির খড়গ চাপে নি¤œস্তরের লোকদের উপর। ভিতরের কথা তো বাহিরে কেউ মুখ খুলে বলতে চান না। এসব বলে শুধু শুধু নিজের ঘারে দোষ কেই বা নিতে চাইবে ? তাছাড়া এসব অনিয়ম নিয় যখনই হৈচৈ হয় তখন, বড় স্যারেরা দুই একজন কর্মকর্তাকে বদলি করেই ওই অধ্যায় ক্লজ করে দেয়’। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ওই বদলি পর্যন্ত’।

অভিযোগ বিষয়ে সার্কেল এ্যাডজুট্যান্ট কাশেম আলী বলেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত করেছেন আনসার সদর দপ্তর থেকে আসা টিম। সেখানে আমার কোন হাত ছিলোনা। তদন্ত কমিটি নিউজের ফুটেজে এবং পত্রিকায় আসা নামধারীদের বিষয়েই তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন বলেই তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করেছেন। উল্লেখিত ইউনিয়ন কমান্ডার কালাম এবং সহকারী কমান্ডার রাজু আহমেদ’র বিরুদ্ধে উঠা সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়নি। এখানে আর্থিক সুবিধা নেয়ার কোন সুযোগ নেই’।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জেলা কমান্ড্যান্ট শফিউল আযম বলেন, ‘আনসার একটি সু-শৃংখল বাহিনী। কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণের অসদাচরণ বা অপরাধ সংঘটনের কারনে শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটুক এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। তাই বাহিনীর শৃঙ্খলা রাক্ষার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই এই ৮জন ভাতাভোগী আনসার সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য,কুষ্টিয়া জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬মাসের মধ্যে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠায় জেলা কমান্ড্যান্ট পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়েরর কর্মকর্তাদের বদলী করা হয়। যদিও এসব বদলিকে সরকারী চাকরির স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে বলে দাবি করেন কর্মকর্তারা। সূত্রমতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এখান থেকে বদলী হওয়া কর্মকর্তাগণ হলেন- জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত, দৌলতপুর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মো: ফরহাদ, সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ভেড়ামারা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা তরুণ কুমার এবং কুমারখালী উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আনসার সদস্যদের তালিকাভুক্তি এবং তাদের জন্য সরকারী বরাদ্দকৃত ভাতার টাকায় ভাগ বসানো।

আরএস