‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রায় হাজারো মানুষের ঢল

মো. সাইফুল ইসলাম, কাউনিয়া (রংপুর) প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রায় হাজারো মানুষের ঢল

কাউনিয়ায় জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রায়  হাজারো মানুষের ঢল 
মো: সাইফুল ইসলাম 
কাউনিয়া (রংপুর)  প্রতিনিধি :তিস্তা মহাপ্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে এবং ভারতের সঙ্গে তিস্তার নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে  জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে কাউনিয়া তিস্তা রেল পয়েন্ট  সেতু এলাকা থেকে হাজারো তিস্তা পাড়ের  লোকজন নিয়ে  পদযাত্রা ও তিস্তা চরে  প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে   আন্দোলন  করছে উপজেলা   তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার পরে  হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে পদযাত্রাটি বের হয়ে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা ঘুরে পুনরায় কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু পয়েন্ট  এসে শেষ হয়   পরে  তিস্তা নদীতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে  হাজারো মানুষ নদী রক্ষার দাবি জানান।

গত সোমবার তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে দুই দিনের  ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির  কাউনিয়া   তিস্তা রেলওয়ে সেতু  সংলগ্ন  পয়েন্টে উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এক যোগে  তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীরে ৫টি জেলায় ১১টি পয়েন্টে দিনভর নানান আয়োজনে প্রথম দিন অতিবাহিত করে তিস্তাপাড়েই তাবুতে রাত যাপন করে  লাখো মানুষ। রাতে রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি তুলে ধরে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিস্তাপাড়ের মানুষের সুখ দুঃখের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যার মাধ্যমে তিস্তার করুন চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতেও সকাল থেকেই কাউনিয়ায়  তিস্তা নদীর তীরে জমে উঠেছে মানুষের ঢল। "জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই!"—এই স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু   এলাকা,। সেই সঙ্গে গতকাল সোমবার থেকে তাবু বসিয়ে রাত্রি যাপন করেছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। প্রতিবাদ হিসেবে দেশীয় সংগীত, নৃত্য, সাংস্কৃতিক খেলাধুলা করেছেন তারা। আজও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছে   কাউনিয়ার  তিস্তা রেলসেতুর নিচে।

জানা গেছে ভারতের উজান থেকে ভাটির দিকে অর্থাৎ প্রবাহিত হওয়া বাংলাদেশের ৫৪ টি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ আটকে দিয়েছে। ভারত তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ গজলডোবা এলাকায় একটি বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়েছে। এ কারণে ফসলি মৌসুমে নদীতে পানি শুকিয়ে যায় এবং চর পড়ে এতে কৃষি ফসলে ব্যাপক পানির সংকট দেখা যায়। কৃষকরা পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারে না। সেই সঙ্গে বর্ষাকালের পানির ভরা মৌসুমে ভারত পানি ছেড়ে দেয় এতে পানি বৃদ্ধিতে এলাকা প্লাবিত হয় এবং ঘরবাড়ি ভেঙে যায় পানি বৃদ্ধি স্রোতে। এবং বাস্তুহারা হয় লাখ লাখ মানুষ।

তিস্তা নদীর বুকে দুইদিনের কর্মসূচিতে শুধু ক্ষোভই নয়, জেগে উঠেছে আশার আলো। মানুষের চোখে-মুখে লড়াইয়ের দৃঢ়তা। তিস্তা নদী রক্ষার এই আন্দোলন শুধু একটি নদীর জন্য নয়, এটি বাংলাদেশের প্রকৃতি, কৃষি ও মানুষের জীবিকার লড়াই। "জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই"—এই স্লোগান আজ হাজারো মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, যেন তিস্তা আবারও প্রাণ ফিরে পাবে এমন প্রত্যাশা তিস্তা পাড়ের মানুষের।

আরএস