অভয়নগরের নওয়াপাড়া নৌবন্দরের ভৈরব নদে চার কারণে ঘন ঘন পণ্যবাহী জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে। গত ১৭ দিনে অভয়নগর অংশে ২টি এবং গত ১৪ মাসে ৬টি পণ্যবোঝাই জাহাজ ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি ভৈরব নদে ইউরিয়া সারবোঝাই একটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি নেই।
কার্গো জাহাজের মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছেন, চারটি মূল কারণে বারবার এই জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে:
১. নিয়মিত খনন না করা: নওয়াপাড়া নৌবন্দরের ভৈরব নদের নাব্য সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। খনন কাজ সুষম ও ধারাবাহিকভাবে না হওয়ায় কোথাও গভীর, আবার কোথাও একেবারেই খনন করা হয় না।
২. নদী দখল: দখলের কারণে ভৈরব নদ সরু হয়ে যাচ্ছে, যা নৌচলাচলের জন্য বিপজ্জনক।
৩. অদক্ষ মাস্টার ড্রাইভার: মাস্টার ড্রাইভাররা নিয়ম মেনে না চলার ফলে মূল চ্যানেলের বাইরে গিয়ে নদের কিনারায় জাহাজ নোঙর করে।
৪. অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ: পুরোনো জাহাজের তলদেশ নিয়মিত মেরামত না করায় অতিরিক্ত পণ্যের চাপ সহ্য করতে না পেরে তলা ফেটে যায় এবং ডুবে যায়।
জানা গেছে, মুজতখালী থেকে আফরাঘাট পর্যন্ত নওয়াপাড়া নৌবন্দরের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। ৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলার শুভরাড়া এলাকায় ভৈরব নদে বিসিআইসির আমদানি করা ৮৫০ টন ইউরিয়া সারবোঝাই এমভি সেভেন সিজ-৪ কার্গো জাহাজটি তলা ফেটে ডুবে যায়। সামিট অ্যাসোসিয়েটস এই ইউরিয়া সারের পরিবহন ঠিকাদার।
এমভি সেভেন সিজ-৪-এর মাস্টার জুয়েল হোসেন জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া খেয়াঘাটে ভৈরব নদে কার্গো জাহাজটি নোঙর করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি ইউরিয়া নামানোর সময় ভাটার জলে জাহাজের তলদেশ মাটিতে থাকা পাথর বা শক্ত কোনো বস্তুর সঙ্গে সজোরে আঘাত করলে তলদেশ ফেটে যায়। জোয়ারের সময় জাহাজটি ধীরে ধীরে ডুবে যায়।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সিদ্দিপাশা এলাকায় আকিজ অ্যাসেনশিয়ালের গমবোঝাই এমভি ওয়েস্টার্ন-২ কার্গো জাহাজটি কাত হয়ে পানি ঢুকে ডুবে যায়। এতে প্রায় ৭০০ টন গম ছিল।
গত বছরের ১৩ এপ্রিল নওয়াপাড়ায় কয়লাবোঝাই এমভি সাকিব বিভা-২ কার্গো জাহাজ নওয়াপাড়া নোনাঘাট এলাকায় নোঙর করার সময় তলা ফেটে নদীতে ডুবে যায়। এতে ৬৮৫ টন কয়লা ছিল। একই বছর ১৫ জানুয়ারি ভাটপাড়া এলাকায় কয়লাবোঝাই এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ কাত হয়ে ডুবে যায়। এতে প্রায় ৮০০ টন কয়লা ছিল।
১৩ জানুয়ারি বিকেলে ধূলগ্রাম এলাকায় এমভি মৌমনি-১ কয়লাবোঝাই কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। এতে ৭০০ টন কয়লা ছিল। ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে দেয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদে এমভি আর রাজ্জাক কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবে যায়। এতে ইন্দোনেশিয়ার আমদানি করা ৮২০ টন কয়লা ছিল।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সদস্য সচিব নিয়ামুল ইসলাম রিকো বলেন, “নওয়াপাড়া ভৈরব নদে নাব্য সংকট প্রকট। দখলে নদ সরু হয়ে আসছে। খনন কাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর, আবার কোথাও একেবারেই খনন করা হয় না। ফলে ঘন ঘন জাহাজ ডুবছে।”
নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, “সব নদ-নদীতে নাব্য সংকট রয়েছে। ভৈরব নদে ড্রেজিং চলছে। মূলত অদক্ষ মাস্টার ড্রাইভাররা নিয়ম না মেনে নদের কিনারায় জাহাজ নোঙর করে। তা ছাড়া পুরোনো জাহাজের তলদেশ নিয়মিত মেরামত না করায় অতিরিক্ত পণ্যের চাপে এসব জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।”
ইএইচ