কি মধু তৌহিদে যার বাজেট শত কোটি!

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম
কি মধু তৌহিদে যার বাজেট শত কোটি!
  • ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর দাপুটে থাকতেন চট্টগ্রাম বিআরটিএতে

  • তৌহিদের জন্য যথেষ্ট তদবির আসছে: বিআরটিএ চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগে ফের তৌহিদুল হোসেনকে নিয়ে আসতে একটি চক্র শত কোটি টাকা বাজেট করেছেন, এমন একটি আলোচনা চলছে।

তার মধ্যে এমন কী মধু আছে, ফের তাকে আনতে চাই, চক্রটি– এমনটি প্রশ্ন বিআরটিএ‍‍`র অনেক গ্রাহকের।

তৌহিদুল হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ধরে ছিলেন ক্ষমতাধর কর্মকর্তা হিসেবে। পরিচালক পদ থেকে কত কর্মকর্তা গেছেন এসেছেন। তবে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের প্রায় শেষ পর্যন্ত ছিলেন তৌহিদুল হোসেন।

এ সময়ের মধ্যে মাঝে মাঝে কয়েক মাসের জন্য আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লবের পর তৌহিদুল হোসেন ৪ নভেম্বর ময়মনসিংহ বিভাগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়জুড়ে থাকা এই কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রচার হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে।

চট্টগ্রাম নগরীর এক গাড়ি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, কম হলেও ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন তৌহিদ। তার অপকর্ম ঠেকাতে বিআরটিএতে গত ২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সকল নথিপত্র পুড়ে যায়। আর সেই অগ্নিকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। এতে তার এবং বিআরটিএ‍‍`র অনিয়ম ধরার কোনো সূত্র থাকল না।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা চলে গেলেও তার আমলে টাকার পাহাড় গড়া কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে আছেন। তাদের মধ্যে তৌহিদও একজন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কোনো তদন্ত না করে ময়মনসিংহে বদলি করা হয়।

সূত্রমতে, তৌহিদকে চট্টগ্রামে আনার জন্য এখনো পর্যন্ত তার চেয়ারটি অর্থাৎ বিআরটিএ সার্কেল-১ হালিশহরের পদটি খালি রয়েছে। যদি তৌহিদুল হোসেন আসতে পারেন, বর্তমান দায়িত্ব থাকা নতুন পাড়া সার্কেল-২ ও হালিশহর সার্কেল-১ এর দায়িত্ব পালন করা উপপরিচালক (ইঞ্জি) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরীকে ময়মনসিংহে যেতে হবে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সবচেয়ে বেশি যানবাহন জোন হিসেবে এগিয়ে চট্টগ্রাম। স্বাভাবিকভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী ও চট্টগ্রাম বন্দর মিলে চট্টগ্রামে গাড়ির চাপ বেশি। এর মধ্যে যত মানুষ, প্রায় ততো মোটরসাইকেল এবং সম্প্রতি স্কুটি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় চলাচলকারী মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯। এর মধ্যে শহরে (মেট্রো এলাকা) ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৩ ও জেলায় ৬৯ হাজার ৯৪৬। নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে শহরের ৪৬ হাজার ৭০৫ ও জেলায় ২৯ হাজার ৬১৫টি যানের ফিটনেস সনদ নেই। এর কয়েকগুণ ভুয়া নাম্বার বা এক নাম্বার দিয়ে একাধিক গাড়ি এবং নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি রয়েছে অহরহ। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় টাকা উড়ে বিআরটিতে। আর যত দুই নাম্বারি কাজ আছে, তার শৈল্পিকতা দিতে পারদর্শী বলে অভিযোগ তৌহিদুল হোসেনের বিরুদ্ধে। এমন কথা আলোচনা বিআরটিএজুড়ে।

টানা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অঘোষিত দ্বিতীয় ওবায়দুল কাদের থাকা এ কর্মকর্তার নামে বেনামে অর্থ সম্পদ নিয়ে তদন্ত না করে জামাই আদরের রেখেছেন কর্তৃপক্ষ, এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে চট্টগ্রামে।

বিআরটিএ সেবা প্রত্যাশী অনেকে প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতির টাকার ভাগ দিলেই কি সব সমস্যার সমাধান শেষ। তৌহিদুল হোসেনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করার জোর দাবি জানান।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, তৌহিদুল হোসেন লটারির মতো ময়মনসিংহ গেলেন। ফের চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট তদবির আসছে। তিনি চট্টগ্রামে দীর্ঘ সময় থাকার ব্যাপারে তার অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে দেখা হবে। তাকে ময়মনসিংহে থাকতে বলা হয়েছে।

তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার জন্য শত কোটি টাকার বিশাল বাজেট করা হয়েছে বলে উড়ো অভিযোগ রয়েছে, এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে কোনো সুযোগ নেই টাকার বিনিময়ে বদলি বা অন্য কিছু। চট্টগ্রামের জন্য আমরা দ্রুত কাউকে পদায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ