আসামি ছিনতাই নাকি পুলিশের নাটক

জাহিদ হাসান, মাদারীপুুর প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম
আসামি ছিনতাই নাকি পুলিশের নাটক

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামিকে ধরেও থানায় আনতে পারেনি মাদারীপুর মডেল সদর থানার তিন পুলিশ অফিসারসহ চারজন। কেউ বলছে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে আবার কেউ বলছে ছিনিয়ে নেয়ার নাটক করে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। 

পুলিশ বলছে আসামি ধরতে গেলে আসামিপক্ষের লোকজন বাধা দেয়ায় আসামিকে ধরতে পারেনি। এ ঘটনায় ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে উল্লেখ করে এবং পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা করেছে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যা মামলার ৩১ নং আসামি সালাউদ্দিন খান ওরফে ছালাই খানকে পুলিশ একাধিকবার ধরতে অভিযান চালালেও ধরতে পারেনি। ৩ মার্চ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সিভিল ড্রেসে মোটরসাইকেল টহলপুলিশ তালতলা এলাকায় গিয়ে আসামি ছালাই খানের সন্ধান পায়। দুই মটরসাইকেলে দুইজন এসআই, একজন এএসআই ও একজন পুলিশ সদস্য মিলে ছালাই খানকে ধরে আনে। তালতলা বাজারের একটি দর্জির দোকানে আসামিকে নিয়ে বসে থানায় পুলিশের গাড়ি পাঠানোর জন্য বলে পুলিশ অফিসার। উৎসুক লোকজন ঐ দোকানের আশেপাশে ভীড় জমাতে থাকেন। বারবার পুলিশ আসামিকে নিয়ে আসতে চাইল আসামি ছালাই খান পুলিশকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। পুলিশের কাছে হাতকড়া থাকলেও রহস্যজনক কারণে হাতকড়াও পরানো হয়নি আসামিকে। ধীরে ধীরে লোকজনের ভীড় বাড়ার সুযোগে ছালাইয়ের লোকজন পুলিশের সামনে থেকে ছালাই খানকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে দিশেহারা হয়ে যায় ৪ পুলিশ। এরপর পুলিশের গাড়ি বাজারে পৌঁছলে দেরি করার কারণ জানতে চেয়ে বাজারের লোকজনের সামনেই চিল্লাচিল্লি করতে থাকে। আসামি পালানোর বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনা স্থানে যায়। সেখানে বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ করার নির্দেশ দেয় এতে পুরো বাজার কয়েক মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়। আসামি এবং আসামিদের ছিনিয়ে যারা নিয়েছে তাদের ধরতে না পেরে বাজারের কাঁচা তরকারি বিক্রেতা মোয়াজ্জেম ফকির ও ফল বিক্রেতা মিনাজুল হাওলাদারসহ ৩ জনকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। এছাড়া শিমুলতলার বাসিন্দা স্থানীয় মেম্বার বোরহান মোল্লার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে থানায় নিয়ে আসে। রাতেই পুলিশের উপর হামলা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার কথা উল্লেখ করে ৪ পুলিশকে আহত দেখিয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১শত থেকে দেড়শত জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এই মামলায় বাজার থেকে ধরে আনা ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয় এবং বোরহান মোল্লার স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়।

যে দোকান থেকে আসামি ছালাই মোল্লাকে ছিনিয়ে নেয়া হয় সেই দোকানের মালিক আব্দুল হান্নান বলেন, আমার দোকানের পুলিশ স্যারেরা ছালাই খানকে ধরে নিয়ে আসে। এখানে বসেই গাড়ির জন্য ফোন করেছে থানায়। পুলিশ ছালাই খানকে ধরেছে জানতে পেরে বাজারের লোকজন আমার দোকানের আশেপাশে জড়ো হয় দেখার জন্য। এর মধ্যে ছালাই খানকে কয়েকজন লোক এসে আমার দোকান থেকে পুলিশের কাছ থেকে ছালাই খানকে নিয়ে চলে যায়। এর পর অনেক পুলিশ আসে আমাদের সবাইকে দোকান বন্ধ করতে বলে আমরা দোকান বন্ধ করে চলে যাই।

স্থানীয় বাসিন্দা ফাইজুল জানায়, আসামি ধরার সাথে সাথে পুলিশ হ্যান্ডকাফ লাগাইবে। কার বাপ আছে ছুডাইয়া নিয়া যাইবে। আসামি ধইরা আইনা দোকানে ডুকাইবে ক্যান? ছালাইর লগে সবসময় দুই তিন লাখ টাকা থাকে। এই এলাকা ওই চালায়। পুলিশ টাকা খাইয়া নাটক সাজাইয়া ওরে ছাইরা দিসে। আমরা বুঝিনা পুলিশ সিভিলে থাকলেও ওদের কাছে মাল থাকে। ৫০/১০০ জন আইলেও কুলাইতে পারবে না। আর ছালাইরে লইয়া গেলো হেরা কিছুই কইলো না। 

স্থানীয় মেম্বার বোরহান মোল্লা বলেন, সোমবার সকালে আমি মাদারীপুর সাব রেজিস্টার অফিসে ছিলাম। ঘটনার সময়ও আমি ঐখানেই ছিলাম। তাহলে আমি কিভাবে আসামি ছিনতাই করি। ঘটনাস্থল থেকে আমার বাড়ি দুই মাইল দূরে। কি কারণে আমার বাড়ি থেকে আমার স্ত্রীকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন ও আমাকে এই ঘটনায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। অথচ এই ঘটনার আমি কিছুই জানি না। ঐ ঘটনাস্থলেও ছিলাম না।

মাদারীপুর মডেল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোকছেদুর রহমান জানান, আমাদের অফিসাররা অনেকদিক ধরেই ছালাই খানকে ধরার চেষ্টা করছে। সোমবার থানার কয়েকজন পুলিশ অফিসার তালতলায় ছালাই খানের থাকার কথা জানতে পারে। তখন তারা ছালাই খানকে ধরতে গেলে লোকজন বাঁধা দেয় এই সুযোগে ছালাই খান পালিয়ে যায়। আমরা ৩ জনকে আটক করে নিয়ে আসি। এখনও ছালাই খানকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসামি ধরতে গেলে পুলিশকে বাঁধা দেয় আসামির লোকজন। এতে পুলিশের সাথে বাঁধা দেয়া লোকজনের সাথে ধস্তাধস্তি হলে আমাদের ৪ পুলিশ আহত হয়। তাদের সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আমি শুনেছি আসামি ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে সোমবার এ ঘটনার পর বাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীও এ এলাকা পরিদর্শন করেছে।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, আমি জানতে পেরেছি হত্যা মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আমার পুলিশকে বাধা দেয়া হয়েছে। এতে আসামি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে এবং ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  

আরএস