২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক সরকারের পতনের পর বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নে সরকারি জমি ও খাল দখলের মহোৎসব চলছে।
দখলদারদের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিশেষত সদর উপজেলার জিরো পয়েন্টের তিন রাস্তার মোড় এবং দিনারের পুল সংলগ্ন এলাকায় ঘটছে।
অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি, সদর উপজেলা বিএনপির নেতা হুমায়ন এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চরকাউয়া জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ থাকার কারণে পানির অভাবে জমিতে ইরি ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে শত শত কৃষক পরিবার উদ্বিগ্ন। কৃষকরা দাবি করেছেন, খাল দখল করে যেসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, তা দ্রুত উচ্ছেদ করা উচিত এবং খাল খনন করে পানির প্রবাহ পুনঃস্থাপন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবি রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মজিবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যে ব্যক্তি জিরো পয়েন্টে খাল দখল করে ব্যবসার জন্য স্থাপনা নির্মাণ করেছে। একইভাবে, দিনারের পোল সংলগ্ন খালটি দখল করে পার্কা মার্কেট নির্মাণ করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা হুমায়ন ও তার ভাগিনা।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ বিষয়ে অবহিত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেন, কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের পাশের খালটি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন রেজাউল ইসলামসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। একসময় প্রবাহিত খালটি এখন অব্যাহত দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন আগে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
স্থানীয় কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, "প্রায় ২ হাজার একর জমিতে ফসল চাষ করি। কিন্তু দিন দিন খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। সরকারী খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে এবং খাল খনন করার জন্য আমি এবং স্থানীয় কৃষকরা আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।"
মজিবরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, "দীর্ঘ বছর কিছু করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে, তাই আমরা আমাদের জমিতে পার্কা স্থাপনা নির্মাণ করছি।" খাল দখলের বিষয়ে হুমায়ন বলেন, "খাল আমাদের জমির ওপর দিয়ে খনন করা হয়েছে। বর্তমানে যে খালটি দখল করেছি, সেটি আমাদের মালিকানাধীন। আমরা আমাদের জমিতে যা ইচ্ছা করতে পারি।"
হুমায়ন আরও বলেন, "আমরা একাই খাল দখল করিনি, সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি ও অন্যরা খাল দখল করে মার্কেট করেছেন। প্রশাসন এত বছর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।"
বরিশাল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম বলেন, "বিষয়টি জানার পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং দখলদারদের সাথে কথা বলেছি। তারা দাবি করেছেন, দখলকৃত খাল তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। তাদের সকল কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসতে বলা হয়েছে এবং খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।"
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, "সংবাদ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। দখলদাররা দাবি করেছেন, দখলকৃত খাল তাদের মালিকানাধীন। তবে তা যাচাই করতে তাদের সকল কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ড সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। যদি তারা কাগজপত্র না দেখাতে পারে, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
ইএইচ